আমাদের ভারত, ১১ জুন: ভোটের ফল প্রকাশের পর এই প্রথম প্রকাশ্যে সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে একাধিক মন্তব্য রাখলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। সমাজ, ধর্ম, গণতন্ত্র নিয়ে ভাগবতের একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য শোনা গেছে নাগপুরে রাখা ওই বক্তব্য থেকে। তাঁর বক্তব্যে এক দিকে যেমন মণিপুরকে শান্ত করানোর দাবি উঠেছে, তেমনি গণতন্ত্রের বিরোধীদের গুরুত্ব দেওয়া, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবার বদলে প্রতিপক্ষ ভাবার বার্তা দিয়েছেন। একই সঙ্গে অহংকার ছেড়ে মানুষের জন্য কাজ করাই যে একজন সেবকের দায়িত্ব বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। এককথায় বলতে গেলে রাজধর্ম কিভাবে পালন করতে হবে সেকথা মনে করিয়েছেন তিনি বলে মত বিশ্লেষকদের।
নাগপুরের অনুষ্ঠান থেকে ভাগবত বলেছেন, একজন প্রকৃত সেবকের অহংকার থাকে না। কাউকে আঘাত করা তাঁর ধর্ম নয়। অনেকেই মনে করেছেন আগের নির্বাচনে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার ফলে কিছুটা একক চিন্তা ভাবনা থেকেই সব কাজ হয়েছে। নিজের সিদ্ধান্তকে একমাত্র গুরুত্ব দিতে গিয়ে কোথাও অহমিকারও প্রকাশ ঘটেছে। এক দু’জনের সিদ্ধান্তই সর্বক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে।
এবার ভোটের সময় যেভাবে প্রচার চলেছে তার শালীনতার মাত্রা অতিক্রম করেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন ভাগবত। তিনি বলেছেন, ভোট প্রচারে দু’পক্ষ থাকে ঠিকই। সেখানে স্পর্ধা প্রদর্শিত হয়, কিন্তু তার মধ্যেও একটা শালীনতা মর্যাদাবোধ থাকা প্রয়োজন। ভাগবত বলেছেন, একজন প্রকৃত সেবক মর্যাদার সঙ্গে চলেন, তিনি কাজ করেন। তার কোনো অহংকার থাকে না। আর তিনিই সেবক বলে নিজেকে দাবি করার অধিকারী।
ভোটের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এআই ব্যবহার করে একাধিক ভুল মিমের ব্যবহার করে প্রচার চালানোর প্রসঙ্গে অসোন্তষ প্রকাশ করেছেন ভাগবত। প্রযুক্তি ব্যবহার করে অসত্যকে তুলে ধরা যায় না বলে দাবি করেছেন তিনি। প্রশ্ন তুলেছেন, জ্ঞানের কি এই ব্যবহার হওয়া উচিত? এভাবে দেশ কেমন ভাবে চলবে?” অর্থাৎ যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করা নয়, মানুষকে নিয়ে, মানুষকে বুঝিয়ে নিজের পক্ষে আনাটাই আসলে সাফল্য।
বিরোধীদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সংঘ চালক বলেন, আমি বিরোধী পক্ষ বলি না, আমি বলি প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষ বিরোধী নয়। তাদের বিরোধী মনে করা উচিত নয়। প্রতিপক্ষ আরেকটা দিক তুলে ধরছে। সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। তবেই ভোটের মর্যাদা থাকবে। কিন্তু সেই মর্যাদা এবার ভোটের সময় মানা হয়নি। বিরোধী শক্তি না থাকলে গণতন্ত্র বলে কিছু থাকে না। বরং সেখানে একনায়কত্বের জন্ম হয়। কিন্তু গণতন্ত্র ভারতবর্ষের ভিত, সেটাকে মনে রেখেই বিরোধীদের যোগ্য সম্মান ও সুযোগ দেওয়ার দরকার বলে মনে করেছেন তিনি।
এরপরই নবনির্বাচিত সরকার সহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ভুলে দেশ গঠনে মনোযোগ দেওয়া উচিত সকলের। প্রতিযোগিতা মানে যুদ্ধ নয়। বিরোধী শিবিরকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। সংসদে বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ঐতিহ্যই হলো ঐক্য মতের বিকাশ। নির্বাচন একটি প্রতিযোগিতা মাত্র যুদ্ধ নয়।
এবার নির্বাচনের প্রচারের সময় একাধিক বার নানা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ নিয়ে নানা কথা উঠেছে। এই প্রসঙ্গে ভাগবত বলেছেন, সংঘ প্রতিটি নির্বাচনে জনমতকে পরিমার্জিত করার জন্য কাজ করেছে। এবারও তাই করেছে। কিন্তু সংঘ কখনো ফলাফলের বিশ্লেষণে জড়ায় না।
মণিপুরের সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে সমাধানের বার্তা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এই সমস্যার একেবারে গোড়া উপড়ে ফেলার প্রয়োজন। তিনি বলেন, “মণিপুর এক বছর ধরে শান্তির জন্য অপেক্ষা করছে। সংঘাতে বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব রাজ্যের পরিস্থিতি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত।”
সংঘ চালকের এই বক্তব্যকে অনেকেই মোদী, শাহদের প্রতি বার্তা হিসেবে মনে করছেন। সরকার গঠনের পর মোহন ভাগবতের এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। একনায়কত্বের মানসিকতার দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা ছেড়ে, অহংকার ত্যাগ করে, গণতন্ত্রের মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়ার বার্তাই দিয়েছেন আরএসএস প্রধান।