রাজেন রায়, কলকাতা, ২৬ নভেম্বর: রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল শাসক দল তৃণমূল। এবার গরু পাচার এবং কয়লা পাচার কান্ডের তদন্তে ধৃত ব্যবসায়ী এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রসঙ্গে রাজ্যপালের অতি সক্রিয়তা নিয়ে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরাধীদের সঙ্গে রাজ্যপালের সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে দাবি করে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ধারায় মামলা দায়েরের আবেদন জানালেন তিনি।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, গরু পাচার এবং কয়লা পাচার দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের পক্ষে কথা বলছেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। অপরাধীদের গ্রেফতার করায় তার বিরোধিতা করে ট্যুইট করছেন তিনি৷ গোবিন্দ আগরওয়াল এবং সুদীপ্ত রায় চৌধুরী নামে দুই অভিযুক্তের হয়ে সওয়াল করছেন রাজ্যপাল৷ বার বার মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন তিনি৷ পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একজন রাজ্যপালের কাছে এটা আশা করা যায় না। তারা অন্তত যেটুকু সংবিধান জানেন, তাতে একজন রাজ্যপালের এটা সাংবিধানিক কর্ম নয়।
কল্যাণের আরও দাবি, গোবিন্দ আগরওয়াল এবং নীরজ সিং নামে এক আইআরএস অফিসারের বিরুদ্ধে ইডি প্রথম মামলা দায়ের করে৷ পিএমএলএ অ্যাক্টে অভিযুক্তদের ৩.৮৮ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করে৷ এর পর ইডি-র থেকে তদন্তের কাগজপত্র সংগ্রহ করে আরও তদন্ত করে কলকাতা পুলিশ৷ ২১ নভেম্বর গোবিন্দ আগরওয়ালকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ৷ অন্যান্য আরও চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের নামও তদন্তে উঠে আসে৷ এই তদন্তেই সুদীপ্ত রায় চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিবিআই-এর কাছ থেকে তথ্য পায় কলকাতা পুলিশ৷ তাকেও গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ৷ এই সুদীপ্ত রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইডি বিধাননগর পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করেছিল বলে দাবি করেছেন তৃণমূল সাংসদ৷ ইডি তদন্তে জানা গিয়েছিল, এই সুদীপ্ত রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে রোজভ্যালির এক কর্মীর থেকে ২ কোটি টাকা নিয়েছিলেন৷ এই ব্যক্তি মানুষ ও গরু পাচার এবং তোলাবাজির বড়সড় চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ করেন কল্যাণ৷
তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র অভিযোগের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ করেছে কলকাতা পুলিশ ও বিধাননগর পুলিশ৷ এমন কি, এই সুদীপ্ত রায় চৌধুরী ইডি-র ভুয়ো তথ্য দেখিয়েও টাকা তুলত বলে অভিযোগ কল্যাণের৷ তাঁর অভিযোগ, গোবিন্দ আগরওয়াল এবং সুদীপ্ত রায় চৌধুরীদের গ্রেফতারের বিরোধিতা করে ২২ এবং ২৫ নভেম্বর দু’টি ট্যুইট করেছেন৷
কল্যাণ বলেন, ‘ইডি যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য কেন বাধা দিচ্ছেন রাজ্যপাল? নাকি সব কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করে নিজেদের ত্রুটিগুলো রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা? রাজ্যপালের সঙ্গে বিজেপি-র এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক ক্রিমিনালের সরাসরি যোগাযোগ আছে৷ বার বার তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে টার্গেট করছেন৷ ট্যুইট করে কলকাতা এবং বিধাননগর পুলিশকে অকেজো করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল৷ পুলিশকে হুমকিও দিচ্ছেন তিনি৷ প্রয়োজন হলে আমরা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পর্দাফাঁস করব।” যদিও এই বিস্ফোরক দাবির কোনো প্রতি উত্তর দেননি রাজ্যপাল।