পরপর তিনটি গুলি, প্রাণে বাঁচলেন আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি মনোরঞ্জন দে, অভিযোগ বিজেপির দিকে

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ২৫ ডিসেম্বর:শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারের সোনাপুরে নিজের বাড়ি ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি মনোরঞ্জন দে। জানাগেছে, নিজস্ব কাজে শিলিগুড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে আনুমানিক রাত ২টা নাগাদ জাতীয় সড়কের মালবাজার মহকুমার মেটেলি থানার ন্যাওড়া নদীর কাছে এই ঘটনা ঘটে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে শিলিগুড়িতে নিয়ে গিয়ে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়।

এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হতেই জেলাজুড়ে আজ সকাল থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, মনোরঞ্জনবাবুকে গুলি করার পেছনে বিজেপির ষড়যন্ত্র আছে। যদিও বিজেপি তৃণমূলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। জানাগেছে, খুব কাছ থেকে পরপর তিনটি গুলি করা হয়। তবে দুটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও একটি গুলি তার পায়ে লাগে। কপাল জোরে প্রাণে বেঁচে যান আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মনোরঞ্জন দে।

তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলার অন্যতম পরিচিত নেতার গুলিবিদ্ধ হবার ঘটনার জেরে কার্যত তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও মনোরঞ্জন দের বাঁ পায়ের অবস্থা স্বাভাবিক হতে অনেকটাই সময় লাগবে বলে জানা গেছে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, গাড়ির প্রথম সিটেই বসেছিলেন মনোরঞ্জন দে। দলের কর্মী অসীম ঘোষ ও তার নিরাপত্তারক্ষী পেছনের সিটে ছিলেন। অল্প সময়ের জন্য জাতীয় সড়কের পাশে গাড়ি থামিয়ে টয়লেট করতে বেড়িয়েছিলেন তিনি। তখনই চলন্ত একটি গাড়ি তার কাছে এসে পরপর তিনটি গুলি করে। প্রথম দুটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও একটি গুলি হাটুর উপরে লাগে। মাটিতে পড়ে যান তিনি। দ্রুত তাকে গাড়িতে তুলে বাকিরা শিলিগুড়িতে নিয়ে আসেন।

এদিকে, রাতেই শিলিগুড়িতে বেসরকারি নার্সিংহোমে পৌঁছে যান মন্ত্রী গৌতম দেব।ঘটনার খবর পেয়ে, আলিপুরদুয়ার থেকে বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের মেন্টর মোহন শর্মা, মৃদুল গোস্বামীরা শিলিগুড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন। মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, এটা আমাদের আশঙ্কা ছিল। বিজেপি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় না।সুপারি কিলার আনছে।পরিকল্পনা মাফিক হামলা হয়েছে। মনোরঞ্জন দে গুরুত্বপূর্ণ নেতা।পুলিশকে কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ি সর্বত্র প্রতিবাদ হবে।”

তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন,”আজকে আলিপুরদুয়ার শহরে একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। আগামীকাল জেলার প্রতিটি ব্লকে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।”

ঘটনার জেরে এদিন সকাল থেকেই আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল নেতারা বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মোহন শর্মা বলেন, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আলিপুরদুয়ারে অতীতে আমরা দেখিনি। রাজনৈতিক লড়াই করার ক্ষমতা নেই বিরোধীদের। উল্লেখ্য, মনোরঞ্জন দে আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি। জেলা কোর কমিটিতে রয়েছেন। এর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তার উপর হামলা হয়েছিল। মৃদুল গোস্বামী বলেন,”হামলাটি তৃণমূলের উপর করা হয়েছে। তাদের নেতাই জানিয়েছিল ডিসেম্বর মাস থেকে অ্যাকশন শুরু হবে।” অন্যদিকে কারা কেন কি উদ্দেশ্যে কোথা থেকে এসে হামলা করলো তা এদিন সন্ধ্যে পর্যন্ত জানা যায়নি।

আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন,”আমরা গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের সঙ্গে সন্ধ্যে পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি। রাত পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যেয় নার্সিংহোম থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, মনোরঞ্জন দের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। পায়ের অপারেশন সফল হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *