আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১২ ডিসেম্বর: রাজ্যের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এবার একসাথে জাতীয় জলাভূমি কর্তৃপক্ষের বিশেষ স্বীকৃতি পেল। আর এই তিনটির মধ্যে দুটি জলাভূমি রয়েছে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলায়। আলিপুরদুয়ারের ঝিলটি জলচর পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আবাসস্থল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ভেতর থাকা নারারথলি। আর কোচবিহারেরটা আলিপুরদুয়ার জেলা লাগোয়া তুফানগঞ্জ মহকুমায় অন্যতম প্রাকৃতিক ঝিল রসিকবিল। এই দুটি যেমন তালিকায় রয়েছে। অপরটি মুর্শিবাদের অহিরন বিল।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের কাছে খুবই খুশির খবর। নারারথলি ঝিল বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কোর এলাকায় রয়েছে। পরিযায়ী পাখিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। গত কয়েকবছর ধরে ঝিলের রক্ষনাবেক্ষন, পরিযায়ী পাখিদের উপর নজর রাখা চলছে। আমরা যথেষ্টই ভাল কাজ করতে পেরেছি নারারথলি ঝিল নিয়ে। তারই একটা স্বীকৃতি পেলাম। দেশের জলাভূমি মানচিত্রে এবার ঝিলগুলি স্থান পেতে চলেছে।”
নারারথলি ঝিল থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প লাগোয়া কামাক্ষাগুড়ির পাশেই রয়েছে প্রকান্ড রসিকবিল ঝিল, যা ইতিমধ্যেই মিনি জু-তে পরিনত হয়েছে। সেখানেও পাখির বৈচিত্র্য কার্যত অবাক করে দেবার মত।
অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের অহিরন বিল পাখি প্রেমীদের কাছে কিছুটা অপরিচিত হলেও আগামীতে বিলটি যে যথেষ্টই জনপ্রিয় হবে তাতেও দ্বিমত পোষণ করেনি প্রকৃতি প্রেমিকরা। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থেকে খুব কাছেই রয়েছে অহিরন বিল। প্রতিবছর শীতে ৫ থেকে ৮ হাজার পাখি সেখানে আসে বলে জানা গেছে।
রসিকবিল ও নারারথলি ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রকৃতি প্রেমিকদের নজর কেড়েছে। রেডক্রেষ্টেড পোচার্ড, স্পট বিল ডাক, গ্যাডওয়াল, কমন ম্যালার্ড, গারগিনি, ঝাঁকে ঝাঁকে লেজার হুইসলিং ডাকদের জন্য গত ২০ বছর একটানা জনপ্রিয় রসিকবিল, নারারথলি। কমবেশি ৫০ থেকে ৬০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে দুটি ঝিলে। শীতের মরসুমে হাজারে হাজারে পাখির উপস্থিতির রেকর্ড গত কয়েকবছরে পাওয়া গেছে।
শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, এবছর ইতিমধ্যেই নারারথলি ঝিল সংস্কারের কাজ হয়েছে। অন্যদিকে ন্যাফের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, “খুবই ভাল খবর। প্রতিটি ঝিলের একটা নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র থাকে, যার সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য জড়িত। তবে শিলিগুড়ির গাজলডোবা ও মালদার নয়াবাঁধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি, পরিযায়ী পাখিদের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি ঝিলের তালিকাভুক্ত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দেশের মধ্যে প্রথম ধাপে এক হাজার জলাভূমি চিহ্নিত করেছিল জাতীয় জলাভূমি কর্তৃপক্ষ, যা ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল ওয়েটল্যান্ড এটলাসে স্থান পেয়েছে। তবে কোনও আর্থিক বরাদ্দ আপাতত নেই।
এদিকে, প্রতিবছরই বনবিভাগের সক্রিয় সহযোগিতায় আলিপুরদুয়ারে রসিকবিল ও নারারথলি ঝিলে পাখি গননার কাজ করে আসছে ন্যাফ সহ অনেক পাখি প্রেমিক সংগঠন। পাখিদের প্রজাতি চিহ্নিতকরণ ও সংখ্যা গোনা দুটি কাজই এবছরও জানুয়ারি মাসে টানা কয়েকদিন ধরে চলবে বলে জানিয়েছেন অনিমেষ বসু। কোভিড পরিস্থিতিতে পাখির সংখ্যা এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আলিপুরদুয়ারে দুটি ঝিল ছাড়াও শিলিগুড়ির গাজলডোবা ও ফুলবাড়িতে ইতিমধ্যেই পরিযায়ীদের আগমন শুরু হয়েছে। শুধু ঝিলই নয় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া নদী গুলিতেও পরিযায়ীদের প্রায় প্রতিদিন দেখা মিলছে।