আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ১৪ জনুয়ারি: মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে পটাশপুরের কেলেঘাই নদীতে পুণ্যস্নান করলেন কয়েক হাজার পূণ্যার্থী। স্নানের পরে তারা পুজো দিলেন তুলসী চারার মন্দিরে। মেলা বসে এই মন্দির ঘিরে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং এর মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে কেলেঘাই নদী। সেই কেলেঘাই নদীর চরে অবস্থিত ৫০০ বছরের পুরোনো তুলসী চারার মন্দির।
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যবর্তী এই জায়গাটির নাম কোলন্দা। কেলেঘাই নদীর চরে এই জায়গায় অন্তত প্রায় ৫০০ বছর আগে একটি মন্দির তৈরী করেন গোকুলানন্দ বাবাজী। মন্দিরের চূড়ায় তুলসী গাছের চারা থাকায় এই মন্দিরের নাম তুলসী চারার মন্দির। সারা বছর এই মন্দিরে তেমন কোনও পুণ্যার্থীর সমাগম না থাকলেও পৌষ সংক্রান্তির সময় এখানে হাজির হন কয়েক হাজার মানুষ। পৌষ সংক্রান্তির ভোরে পুণ্যস্নান উপলক্ষ্যে দুই মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার মানুষজন এখানে হাজির হন। এমনকি পাশের রাজ্য ওড়িশা থেকেও বহু মানুষ আসেন এই মন্দিরে। ভোর থেকে শুরু হয় পুণ্যস্নান। বাচ্চা থেকে বুড়ো, পুরুষ থেকে মহিলা সকলে স্নান করেন কেলেঘাইয়ের জলে। কয়েক কিলোমিটার জায়গা ধরে চলে স্নান। প্রবল শীত উপেক্ষা করে বহু মানুষ মেতে ওঠেন মন্দিরের মাথায় মাটি দেওয়ার আনন্দে। নদীর চরের একটা উঁচু জায়গায় মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরের দেওয়ালে মাটি দেওয়া একটি পুণ্য কাজ বলে মনে করেন পুণ্যার্থীরা। এই তুলসী চারার মন্দিরে মাটি দিলে রোগ সেরে যায় বলে বিশ্বাস পুণ্যার্থীদের। এছাড়াও কেউ মানসিক রাখলে তা পূর্ণ হয়। নিজের মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার জন্য অনেকে এখানে আসেন প্রতি বছর এই তুলসী চারার মন্দিরে মাটি দেওয়ার জন্য। সংক্রান্তির পুণ্যস্নান শেষে নদীর মাটি ওই মন্দিরে নিয়ে গেলে হয় অধিক পুণ্য এই ধারণা দীর্ঘদিনের। স্নান সেরে মন্দিরে পূজো দেন সব পুণ্যার্থী।
তুলসী চারার মন্দির ঘিরে গড়ে ওঠা মেলা তুলসী চারার মেলা বলেই খ্যাত। এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ প্রাচীন এই মেলা। এই তুলসীচারার মন্দির তথা গোকুলানন্দজীর মন্দির অবস্থিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। আর মেলা হতো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। মাঝে কেলেঘাই নদী। যোগাযোগের জন্য নদীর উপর তৈরি হতো অনেকগুলো অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর, ভগবানপুর, এগরা, ময়না সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং, পিংলা, দাঁতন এলাকার প্রচুর মানুষ শীতের সকালে হাজির হত এই মেলায়। মেলা চলতো ১৫ দিন। মেলা কমিটির সদস্যদের দাবি, মেলার বয়স পাঁচ থেকে সাতশ বছর। এবছর মেলা সম্পূর্ণ বন্ধ। কিন্তু পুণ্যার্থীরা স্নান সেরেছেন আগের মতই।