‘যারা মুখ খুলছেন, তারা চাইলে দল ছাড়তে পারেন, ত্রাণ-রেশন নিয়েও কড়া বার্তা মমতার

রাজেন রায়, কলকাতা, ৬ জুন: নিজের হাতে তৈরি দলের ক্রটিবিচ্যুতি নিয়ে দলের মধ্যে শৃঙ্খলাভঙ্গকে যে তিনি কোনওভাবেই বরদাস্ত করবেন না, দলীয় বিধায়ক-নেতাদের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকে তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকে তিনি বলেন, ‘কলকাতার নেতাদের বলছি, যারা এদিকে-ওদিকে মুখ খুলছেন, তারা চাইলে দল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন।’ সেই সঙ্গে দলের অনেক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে খুশিমতো কমিটি গঠন করার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতেও রাশ টেনে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘রাজ্য কমিটির অনুমোদন ছাড়া জেলা সভাপতিরা সাংগঠনিক রদবদল করতে পারবেন না। এককভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। কাউকে বাদ দিতে হলে কিংবা নিতে হলে আগে রাজ্য কমিটিকে জানাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ত্রাণ কিংবা রেশন নিয়ে কোনও রাজনীতি-দলবাজি করা যাবে না। সব দলের মানুষই যাতে রেশন আর ত্রাণ পান তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি-অনিয়ম বা দলবাজি হলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন সবরকম ব্যবস্থা নেবে। দল তার পাশে থাকবে না।’ রাজ্য প্রশাসনের সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও তৃণমূল নেতার দলবাজিতে যদি দলের ক্ষতি হয়, তাহলে সেটাও তিনি সহ্য করবেন না, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন।

দল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকিতে কারও নাম উল্লেখ না করলেও তৃণমূল নেত্রীর নিশানায় যে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, তা নিয়ে সংশয় নেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। সম্প্রতি আমফান মোকাবিলা নিয়ে কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন মানিকতলার বিধায়ক তথা ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমফান মোকাবিলায় যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না কলকাতা পুরসভা। ১৪০টি ওয়ার্ডে কেন মাত্র ২৫টি গাছ কাটার মেশিন? প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মেশিন থাকার দরকার ছিল।’ দলের বর্ষীয়ান নেতার মন্তব্যে যথেষ্টই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শাসকদলকে। দলবিরোধী কাজের অভিযোগ এনে মানিকতলার বিধায়ককে শো-কজ করেন তৃণমূলের উত্তর কলকাতা জেলা সভাপতি তথা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও এদিন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সংগঠনের ভার পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষের কাছ থেকে কেড়ে সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য সরকারের এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে বিরোধীরা, ভিডিও বৈঠকে এমন অভিযোগ উঠে আসে। তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘ফেক নিউজ রুখতে নেতা ও কর্মীদের সক্রিয় হতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও শক্তিশালী ও নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের দুঃসময়ে ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রঙ দেখা যাবে না। সব দলের নেতা, কর্মীরাই যাতে ত্রাণ পান, সেই বন্দোবস্ত করতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার পাশাপাশি তারা যাতে ভাল ভাবে থাকেন, তার বন্দোবস্ত করতে সচেষ্ট হতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *