আমাদের ভারত, ৬ এপ্রিল: দক্ষিণ ভারত এবারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসকে ভরসা জোগাবে না। বরং বিজেপি সেখানে চমক দিতে পারে। এমনটাই মনে করছেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট ও কংগ্রেসের পথকে আরো কঠিন করতে পারে দক্ষিণ ভারত। বদলে বিজেপির ফলাফল ভালো হতে পারে সেখানে। তারই ইঙ্গিত দিলেন ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর।
পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর ভারতে বিজেপি বরাবরই শক্তিশালী। ২০১৪ থেকে এই অংশে পদ্ম পতাকা উড়ছে। গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া কাজই করেনি। মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ছত্রিশগড়, বিহারে লোকসভার নিরিখে বিজেপির ফল ভালো। এবারও সেই ছবিটি খুব একটা যে বদলাবে তা মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতেও কংগ্রেসের অবস্থা তথৈবচ। আমেঠির মতো কেন্দ্র থেকে লড়ছেন না রাহুল গান্ধী। তাই শতাব্দী প্রাচীন দলটিকে সে অর্থে ভরসা রাখতে হচ্ছে দক্ষিণ ভারতের উপর।
যে দক্ষিণ ভারত ইন্দিরা আম্মাকে কোনদিন ফেরায়নি। সেই বিন্ধ পর্বতের ওপারের মানুষ এবার রাহুলদেরও পাশে দাঁড়াবে না। দ্রাবিড় ভূমিকে নিজেদের এলাকা বলে মনে করলে কংগ্রেস ভুল হিসেব করবে, বলে মত প্রশান্ত কিশোরের।
পিকের কথায় ১০ বছরের উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। এবার দক্ষিণ- পূর্ব ভারতের চমকপ্রদ ফল করতে চলেছে কেন্দ্রের শাসক দল। দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে আসন সংখ্যার পাশাপাশি ভোটের শতাংশ অনেকটা বাড়বে পদ্ম শিবিরে। পিকের দাবি অনুযায়ী, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দক্ষিণ থেকে সাফ হয়ে গেলেও লোকসভা ভোটে কার্যত গেরুয়া ঝড় বইবে। তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানার মত রাজ্যে ভালো ফল করবে বিজেপি।
পিটিআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিকে দাবি করেছেন, প্রথমবার তামিলনাড়ুতে বিজেপির ভোট শেয়ার দু’ অঙ্কের ছোঁবে। ২০১৯- এর লোকসভা ভোটে তামিলনাড়ুতে বিজেপির ভোট শেয়ার ছিল ৩.৬ শতাংশ। ২১- এর বিধানসভা নির্বাচনে তা কমে দাঁড়িয়েছিল ২.৬%। কিন্তু পিকে মনে করছেন সংখ্যা গরিষ্ঠতার দিক থেকে তেলেঙ্গানাতে প্রথম বা দ্বিতীয় হতে পারে বিজেপি। শুধু তাই নয়, বাংলা, ওড়িশাতেও মোদী বাহিনী প্রথম হতে চলেছে বলে দাবি প্রশান্ত কিশোরের। তবে আসন সংখ্যা বাড়লেও ৩৭০ আসনের যে টার্গেট বিজেপি নিয়েছে সেটা সম্ভব নয় বলে মত পিকের।
তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, অন্ধপ্রদেশ, কেরালা, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারে মিলিতভাবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ২৯টি আসন পেয়েছিল। ২০১৪- তে ৪৭টি। কিন্তু এবার পিকের দাবি অনুযায়ী, বিরোধী শিবির যতই এক ছাতার তলায় এসে জোট গঠন করুক না কেন, পদ্ম শিবির এবার সব রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে জগনমোহন রেড্ডির কাছে বিজেপি বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে বলে তাঁর দাবি। উত্তরের পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্ব ভারত বিজেপির অন্যতম টার্গেট সেটা স্পষ্ট।
ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই দক্ষিণের মন জয় করতে মাঠে নেমে পড়েছিলেন মোদী ও শাহ বাহিনী। সেই প্রক্রিয়ায় এখনো পর্যন্ত কোনো বিরাম নেই। রাম মন্দির উদ্বোধনের সময় বারবার তামিলনাড়ুর কথা তুলেছেন মোদী। বনবাস কালে দক্ষিণে যেসব জায়গায় রামচন্দ্র গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয় সেই সবগুলি জায়গাতে সময় কাটাতে দেখা গিয়েছিল মোদীকে। নির্বাচনী প্রচারেও বারবার দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে সফর করতে দেখা গেছে মোদীকে। এবার তারই সুফল লোকসভা ভোটে বিজেপি পাবে বলে মনে করেছেন পিকে।