আমাদের ভারত, ১৭ জুন: বিধানসভায় নাম না করে সুকান্ত মজুমদারকে আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী। এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সাগরেদরা তলা চাটা পুলিশকে বাঁচাতে শিখ সম্প্রদায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০২০ সালে এক শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পুলিশ কী অভব্য আচরণ করেছিল। আবার তাকে হাফ মিনিস্টার বলার পাল্টায় মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে জবাব দিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর মতো পাকিস্তান প্রীতি নেই তাঁর।
বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রের এক হাফ মন্ত্রী আমার বাড়ির মোড়ে গিয়ে হাওয়াই চটি ছুড়েছেন। কর্তব্যরত একজন পাঞ্জাবি অফিসারকে হাওয়ায় চটি ছুড়ে মারলেন। পাঞ্জাবি সম্প্রদায় এর প্রতিবাদ করেছে। চটির প্রতি এত ভালবাসা থাকলে চটির দোকান খুলুন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০২০ সালে নবান্ন অভিযানের সময় বলবিন্দর শিং নামে এক শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের পাগড়ি খুলে তার চুল ধরে টানতে টানতে মমতা সরকারের পুলিশ কিভাবে হিরহির করে টেনে নিয়ে গিয়েছিল যার বিরুদ্ধে গোটা শিখ সমাজ গর্জে উঠেছিল।
অন্যদিকে হাফ মিনিস্টার প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার পাল্টা নিশানা দেগে বলেন, হাফ মিনিস্টার হই বা ফুল মিনিস্টার। যেটুকু আছে দেশের জন্য করি। দেশকে ভালোবেসে করি। পাকিস্তান, বাংলাদেশকে ভালোবেসে করি না। মুখ্যমন্ত্রী বিরাট নাম, কিন্তু মনের ভিতরে যদি পাকিস্তান- বাংলাদেশ থাকে তাহলে ওরকম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে কোনো লাভ নেই। হাফ মিনিস্টার হই বা ফুল মিনিস্টার হই বুকের ভেতর ভারত আছে।
মহেশতলায় হিন্দুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে সরব হয় বিজেপি। ১২ জুন সেখানে যেতে গেলে পুলিশ তাকে আটকে দেয়। এরপর সুকান্ত মজুমদার একটি তুলসী মঞ্চ নিয়ে কালীঘাটের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিতে গেলেও পুলিশ বাধা দেয়। সেদিনের সেই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পিচবোর্ডের কাটআউট করা প্রতিকী হাওয়ায় চটি ছোড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। যখন তাকে গ্রেফতার করে জোর করে পুলিশ প্রিজন ভ্যানে তুলছিল সেই সময় সুকান্ত মজুমদার সেই পিচবোর্ডের হাওয়াই চটি ছুড়েছেন। ঘটনাচক্রে সেটি গিয়ে শিখ সম্প্রদায়ের এক পুলিশ কর্মীর পাগড়িতে গিয়ে লাগে। তাতেই তৃণমূল অভিযোগ করে, এতে শিখদের অপমান করা হয়েছে। সুকান্ত মজুমদারকে ক্ষমা চাইতে হবে। কলকাতার শ্রী গুরু সিং সভাও একই দাবি জানিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার জানান, এটি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশই ধরা হচ্ছে, যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি একসময় শিখদের অত্যাচার করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের উদ্দেশ্যে ছোড়া চটি শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের মাথায় গিয়ে পড়েনি, যার মাথায় পড়েছে তিনি তার সিকিউরিটি। তিনি এটা নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি।
সুকান্তবাবু বলেন, “যার মাথায় পড়েছে তিনি কি কমপ্লেন করেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইশারায় এটি হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোল্লা তোষণ করছেন এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে উস্কানি দিচ্ছেন। সেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য একসময় গুরু তেগ বাহাদুরের মাথা দিল্লিতে কেটে ফেলা হয়েছিল। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্যই এক সময় শিখ গুরুদের দেওয়ালে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল, কারণ তাদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল, তারা তা গ্রহণ করেননি। আমি মনে করি সাধারণ শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। একটি কাগজ উড়ে গিয়ে কারো মাথায় পড়েছে। আমি ওনাদের বলছি, ওনারা দূর থেকে কাগজ ছুড়ে দেখুন ওই ছোড়া কাগজ কন্ট্রোলের মধ্যে থাকে কিনা। আমরা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে ছুড়ে মেরেছি। মা সরস্বতীর কাছে যখন আমরা অঞ্জলি দিই তখন সেই ফুল যদি হাঁসের গায়ে গিয়ে পড়ে সেটা কি মাকে অঞ্জলি দেওয়া হয় না? আমি জুতোটা ছুড়েছিলাম পুলিশের জন্য। ওটা পুলিশের গায়ে পড়েছে, কোনো শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের গায়ে পড়েনি। যার মাথায় লাগার কথা ওনারা বলছেন সে আমার সিকিউরিটি। সে কোথাও কমপ্লেন করেছে কি? সে কোথাও কমপ্লেন করেনি। এমনকি তিনি প্রয়োজনে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে চেয়েছেন।”
তিনি আরো বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চটি চাটা পুলিশের উদ্দেশ্যে ওটা ছোঁড়া হয়েছে, তাদের গায়েই গিয়ে পড়েছে। পুলিশকে বাঁচাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সাগরেদরা শিখ সম্প্রদায়কে ঢাল করছে। এদের ঢাল করে তারা বাঁচার চেষ্টা করছে।