আমাদের ভারত, ২১ এপ্রিল: গত ১১ এপ্রিল থেকে উতপ্ত মুর্শিদাবাদ। ওয়াকফ সংশোধনী আইন কার্যকর হতেই দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় বাংলার বেশ কিছু জায়গায়। নৃশংস ভাবে খুন হতে হয় জাফরাবাদে এক হিন্দু পরিবারের বাবা ও ছেলেকে। সোমবার সেই পরিবারের সঙ্গেই দেখা করে গেলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
সোমবার জাফরাবাদে খুন হয়ে যাওয়া বাবা হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। পরিবারের তরফে এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার জানান, তাঁরাও এই একই দাবি করেছেন। তিনি ঘুরে দেখেন ঘটনাস্থল। অভিযোগ, সেখানে বহু মন্দির ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সেখানে তিনি কথা বলেন ওই পরিবারের সঙ্গে। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, মন্দিরগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। দেব দেবীর মূর্তি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আমি জানি না এরা কোন ধর্মের? দেবদেবীর মূর্তি ভাঙ্গলে কোনো লাভ হয় কি ওদের ধর্মে? পুন্য হয় কিনা সেটাও আমার জানা নেই। যারা অন্যের ধর্মকে সম্মান করতে জানে না তারা নিজের ধর্মকেও সম্মান করে বলে আমার মনে হয় না। তিনি তৃণমূল সুপ্রিমোকে কটাক্ষ আরো বলেন, মানুষকে বোকা বানাতে দিঘায় ৩০ তারিখ নকল মন্দির উদ্বোধন করছেন মমতা। ঐদিনই এখানে আসল মন্দির প্রতিষ্ঠা করুন। নকল হিন্দুদের দিয়ে কাজ হবে না।
সুকান্ত মজুমদার আরো বলেন, আক্রান্ত প্রত্যেকেরই দাবি, এলাকায় একটি স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প দরকার। আমি রাজ্য সরকারকে বলবো এই ঘটনার সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফকে এখানে ক্যাম্প করার অনুমতি দিন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জানান। প্রয়োজনে কেন্দ্রের সঙ্গে আমরা কথা বলে নেব।
এদিকে সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে নির্যাতিত হিন্দুরা হাত জোড় করে সুকান্ত মজুমদারের সামনে নিজেদের অভাব অভিযোগ জানান। স্থানীয়দের সাহস জুগিয়ে তিনি বলেন, ভয় পাবেন না। ভয় পেলে আরো ভয় দেখাবে। তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে মুর্শিদাবাদের ঘর ছাড়াদের পুলিশ চাপ দিয়ে বাড়ি ফেরাচ্ছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ ঘিরে শোরগোল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেন, পুলিশ চাপ দিয়ে নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই পুলিশ কাজ করছে। ঘরছাড়াদের জোর করে ঘরে ফেরাচ্ছে, অথচ তাদের ঘরবাড়িই তো পুড়ে গিয়েছে।এরপর যদি একজনও হিন্দু মারা যায় তার জন্য দায়ী থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এখনো কেন আসেননি মুখ্যমন্ত্রী? তাঁর আসা উচিত ছিল। ইমামদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ওদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদে কোথায় কাড়া হয়েছে জানি না, সবাই ছিঃ ছিঃ করছে। এত বাজে প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের আস্থা ফেরাতে ওনার আসার দরকার ছিল।
মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে বাবা-ছেলে খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে মূলচক্রী জিয়াউল। চোপড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জিয়াউল সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা। এই নিয়ে ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো চার। সব মিলিয়ে এখনো থমথমে মুর্শিদাবাদ।