University, Cow, গো-মাতার দুধ বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দিল বিশ্ববিদ্যালয়

মিলন খামারিয়া, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১৫ ফেব্রুয়ারি: আজ বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল গবেষণা কেন্দ্রে,’ AICRP on forage crops & utilization for scsp/tsp’- এর অধীনে,’শস্য বিজ্ঞান বিভাগ’- এর পক্ষ থেকে এক দিনের কর্মশালার আয়োজন করা হয় গো-খাদ্যের উপরে। এই কর্মশালায় পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতা- জেলার ৭০ জন কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন। এই কর্মশালার আয়োজন করেন গো-খাদ্য বিভাগের অধ্যাপক ড: কল্যাণ জানা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ফল গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ফটিক কুমার বাউরি এবং সমাজসেবী অনিল রায় ও আশিস সরকার।

শুরুতেই গো-মাতা পালন করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন অনিল রায়। দেশি গরু পালন করার উপর জোর দেন তিনি। গো-পালন করলে দুধ, গোবর, গো-মূত্র পাওয়া যায়। দুধ থেকে দই, ঘি, পনির, ছানা ইত্যাদি তৈরি করা হয়, যা আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকে। পাশাপাশি গোবর হল গো- বর অর্থাৎ গো-মাতার আশীর্বাদ স্বরূপ। এই গোবর জমিতে চাষের কাজে ব্যবহার করে জৈব পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা যায়। গো-মূত্র – জৈব পদ্ধতিতে কীটপতঙ্গ দমন করার দ্রব্য তৈরি ও সার হিসাবেও ব্যবহার করা যায়। গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে আমাদের দেশি গরু পালন করা উচিত – বলেও জানান তিনি। শহরের অনেক মানুষ আজকাল একত্রিত হয়ে, জায়গা কিনে; গো-মাতা পালন করছেন বিশুদ্ধ দেশি গরুর দুধ পাবার জন্য – একথাও বলেন অনিল।

এই গো-মাতার খাদ্য হিসাবে সবুজ ঘাস দেওয়া প্রয়োজন। বছরের বিভিন্ন সময় কী ধরনের গো-খাদ্য চাষ করে গো-মাতাকে খাওয়ানো উচিত সে বিষয়ে জানান ড: জানা।

জৈব পদ্ধতিতে ফসল চাষ করা উচিত। মাটি আমাদের মা। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করার কারণে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। মাটি লবনাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির একটাই উপায়- জৈব পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা, বলে জানান আশিস সরকার। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আমরা বিভিন্ন মারণ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। পাঞ্জাবে ক্যান্সার ছেয়ে গেছে, আমাদের রাজ্যও সেই দিকেই এগোচ্ছে। প্রতিদিন সকালে বাজার থেকে একব্যাগ বিষযুক্ত সবজি, ফল, মাছ-মাংস কিনে আনছি আমরা। এর থেকে মুক্তির উপায় কৃষকদের দিয়ে জৈব পদ্ধতিতে চাষ করানো। কৃষকদের সচেতন ও সাহায্য করার জন্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক সমাজের এগিয়ে আসা উচিত।

এই কর্মশালায় FPO/FPC গঠনের মাধ্যমে কীভাবে কৃষক বন্ধুদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যায়- সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়। মাতৃশক্তিকে স্বাবলম্বী করার জন্য সেলফ হেল্প গ্রুপ করা উচিত। নারী শক্তি জাগলে সমস্ত সমস্যা দূর হবে বলেও আলোচনা করা হয়।

এই কর্মশালায় অধ্যাপক বাউরি বিভিন্ন প্রকারের কলম – গুটিকলম, চারাকলম, জোরকলম-এর সাহায্যে পেয়ারা, লেবু, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি কলমের চারা তৈরি নিয়ে আলোচনা করেন এবং কীভাবে এই কলম করা যায় তা হাতে কলমে দেখিয়ে শেখান আগত কৃষক বন্ধুদের।

এই কর্মশালা নিয়ে ড: জানা জানান, সবুজ গো-খাদ্য চাষের উপর বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ জোর দিচ্ছে দুধের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য। সবুজ গো-খাদ্যে ক্রুড প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। আমরা শুধুমাত্র গো-মাতাদের ধানের খড় খাইয়ে থাকি বা অন্যান্য খাবার দিই কিন্তু সবুজ গো-খাদ্য অতটা পরিমাণ দিতে পারি না। বছরের বিভিন্ন সময়ে সবুজ গোখাদ্য চাষের মাধ্যমে যদি গো-মাতাদের পুষ্টিসমৃদ্ধ সবুজ ঘাস দেওয়া যায় তাহলে দুধের পরিমাণ ও মান দু-ই বাড়ে। আর সেই সঙ্গে সবুজ গো-খাদ্য চাষের মাধ্যমে মাটির উর্বরতাও অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। মাটিতে জৈব কার্বনের পরিমাণ বাড়ে এবং উপকারী জীবাণুর সংখ্যাও বাড়ে, যা মাটিকে আরও উর্বর করে তোলে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই আজকের এই কর্মশালার আয়োজন করেছি আমরা।

আজ আগত কৃষক বন্ধুদের কৃষি সামগ্রী- কলাই, মুগ, তিল বীজ, কোদাল, স্প্রে মেশিন, ব্যাগ, ফ্লাই ট্র‍্যাপ ও অনু খাদ্য দেওয়া হয়। এই কাজে সাহায্য করেন সুরজিৎ বিশ্বাস, সৌম্য মজুমদার ও লিপিকা ঘোষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *