পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা প্রতিরোধ কমিটির দীর্ঘদিনের দাবিকে মান্যতা দিয়ে অবশেষে ফি বছরের জলযন্ত্রণার দুর্ভোগ খানিকটা কমানোর লক্ষ্যে খাল সংস্কারের পাশাপাশি লকগেটগুলির আধুনিকীকরণ করতে চলেছে সেচ দপ্তর। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাসকের নির্দেশে জেলার মধ্যে থাকা সেচ দপ্তরের লকগেটগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দপ্তরেরই ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলার নিচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত তমলুক মহকুমা এলাকা। জেলার নিকাশী খালগুলি দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়ায় খালগুলি মজে গিয়ে খালের জলবহন ক্ষমতা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ খালগুলির সঙ্গে নদীর সংযোগস্থলে থাকা লকগেটগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও সাটার তোলা-ফেলা নিয়ে ছিল জলবন্দি এলাকার মানুষজনদের বিস্তর অভিযোগ। এই পরিপ্রেক্ষিতে জোয়ার-ভাটার সময় জলনিকাশী কিংবা জলসেচের জল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নানা অভিযোগ আসছিল। সম্প্রতি পাঁশকুড়ার কাঁসাইয়ের নদীবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। সেই সঙ্গে আবার ঘূর্ণিঝড় “ডানা”র প্রভাবে অতিবৃষ্টির জল বের হতে না পেরে পাঁশকুড়ার পাশাপাশি কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী ও তমলুক ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি ও জলবন্দি হয়। ওই জমা জলে এলাকার আমনধান, ফুল ও সবজি চাষ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। যদিও এই পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের দাবি মেনে ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমারই গুরুত্বপূর্ণ ১৩টি নিকাশি খাল পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে-সেচ ও জেলা প্রশাসন। এই অবস্থায় ওই নিকাশি খালগুলির সঙ্গে নদীর সংযোগস্থলে থাকা নিকাশি ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া লকগেটগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের নির্দেশ দেয় রাজ্য সেচ দপ্তর। সেইমত দপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল বিভাগের হাতে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ১৫টি খাল এলাকার ৯৯টি ফুকার যুক্ত ১৫টি লকগেট আধুনিকীকরণ করা হবে। ধাপে ধাপে বৈদ্যুতিকরণের মাধ্যমে অটোমেটিক সিস্টেমে সাটার ওঠা-নামার ব্যবস্থা করা হবে বলে দাবি আধিকারিকদের। ইতিমধ্যেই এর জন্য ডিপিআর তৈরি করে রাজ্যে পাঠানোর কাজ শুরু করেছেন দপ্তরের আধিকারিকরা। আগামী বছরেই জেলার এই খালগুলি সংস্কারের পাশাপাশি লকগেটগুলিকে প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে আধুনিকীকরণ করা হবে বলে দাবি সেচ দপ্তরের।
সেচ দপ্তরের মেদিনীপুরের মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অরূপ কুমার ঘোষ বলেন, ২ ফুকার থেকে ৩০ ফুকার পর্যন্ত লকগেটগুলি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিককরণ করা হবে। ধাপে ধাপে সোয়াদিঘি, গঙ্গাখালি, দেহাটি, দেনান প্রভৃতি লকগেটের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরের গুরুত্বপূর্ণ সব লকগেটগুলি সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। এর জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ডিভিশনের শাখায় সার্ভের কাজ চলছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক জানান, এতদিন উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নদী সংলগ্ন খালের উপর থাকা লকগেটগুলির কার্যকারিতা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ লাগাতার আন্দোলনের ফলে সেচ দপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল বিভাগ এই দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা আশাবাদী। বর্ষার পূর্বেই সমস্ত ফ্ল্যাপ ও গিয়ার শাটারগুলি যাতে ঠিকমত কাজ করে, তা ওই বিভাগকে দেখতে হবে।
সেচ দপ্তরের পূর্ব মেদিনীপুর ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার দেবব্রত সরকার জানান, খাল সংস্কারের পাশাপাশি বর্ষার সময় জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রণে লকগেটগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাজ্য সেচ দপ্তরের নির্দেশমত গুরুত্বপূর্ণ ওই লকগেটগুলি দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য দপ্তরেরই ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ওই বিভাগই তা নিয়ন্ত্রণ করবে।