আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ১৪ জানুয়ারি: “আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে”। কোপাই নদীকে নিয়ে লেখা এই পদ্য কবিগুরু রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস জুড়েও রয়েছে কোপাই নদীর কথা। হাঁসুলি বাঁকের উপকথা এই কোপাই নদীকে ঘিরে। রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্করের কোপাই নদী আর ভালো নেই। দিনের পর দিন নদীর পাড় দখল করে গজিয়ে উঠছে হোটেল, রেস্তোরা। এখন আবার মন্দিরের নামে গজিয়ে উঠছে অট্টালিকা। কোপাই নদী বাঁচাতে কোপাই নদীর তীরে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিল শান্তিনিকেতন খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতি। তারা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন জমি হাঙ্গরদের কথা।
প্রসঙ্গত, শান্তিনিকেতনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কোপাই নদী। আঞ্চলিক নাম শাল নদী। এটি ময়ূরাক্ষী নদীর একটি উপনদী। রবীন্দ্রনাথের লেখনীতে আমরা কোপাই নদীকে পাই প্রতিবেশিনী কোপাই নদী হিসাবে। সেই কোপাই নদী দখল করে চলছে অবৈধ নির্মাণ কাজ। এভাবে দিনের পর দিন কোপাই নদী দখল করে নির্মাণ কাজ চললে আগামী দিনে আর কোপাই নদীর অস্তিত্ব থাকবে না।
এই কোপাই নদীর জলের উপর নির্ভর করেন স্থানীয় মানুষজন। নদীতে গ্রীষ্মকালে জল পান করে গৃহপালিত পশু। সেই নদীর এখন দূরবস্থা। নদীতে তোলা হচ্ছে অবৈধ ভাবে বালি, মাটি। খুব স্বাভাবিকভাবেই কোপাই নদীকে বাঁচাতে বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কোপাই নদীর তীরে চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। সেখানে সামিল হয়েছেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, কর্মী, পরিবেশবিদ অনেকে।
কিশোরবাবু বলেন, “কোপাই নদী রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের নদী। শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে কোপাই নদী প্রিয় নদী। কবিগুরু তাঁর লেখনীতে কোপাই নদীকে প্রতিবেশিনী নদী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সেই নদীকে বাঁচাতে আমরা অবস্থানে বসেছি। জানি না কার মদতে কোপাই নদী দখল করে গজিয়ে উঠছে রেস্তোরা, অট্টালিকা। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষ বাঁচতে পারে না। আদিবাসী গ্রামের মানুষজন এই নদীতে স্নান করেন। তাদের গবাদিপশুকে স্নান করান। এরকম একটা নদীকে লোপাট করে সংস্কৃতি বেঁচে থাকতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত বিষয়টি জানেন না। আমরা একশো জন অধ্যাপক অধ্যাপিকার সাক্ষরিত অভিযোগ পত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। জেলা শাসক, বিশ্বভারতীর ছাত্র মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার কাছেও প্রতিলিপি জমা দেব। আমাদের লক্ষ্য কোপাই নদী বাঁচানো”।
অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন,
“রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের নদীকে বাঁচাতে আমরা নদীর ধারে অবস্থানে বসেছি। কোপাই নদীকে আমাদের বাঁচাতেই হবে”।