হাইকোর্টের নির্দেশ! অবৈধভাবে পঞ্চায়েত দখল নিয়ে বালুরঘাটে মুখ পুড়লো তৃণমূলের

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৭ ফেব্রুয়ারি: হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধভাবে দখলে রাখা তৃণমূলের পঞ্চায়েত ছিনিয়ে নিল বিজেপি। মুখ পুড়লো শাসক দলের। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাড়তি অক্সিজেন গেরুয়া শিবিরে। বালুরঘাট শহর লাগোয়া ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির এই জয়ে আনন্দে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন নেতা কর্মীরা। যদিও এর আঁচ পেয়ে আগে ভাগেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান মল্লিকা কর্মকার সুত্রধর। গত শুক্রবারই পঞ্চায়েত প্রধান তার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য বিডিওর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। অবশেষে সেই আবেদন গৃহীত হয় এদিন। একইসাথে সেই ইস্তফা পত্র পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের হাতে তুলে দেন মল্লিকা কর্মকার সূত্রধর। শুধুমাত্র প্রধানের পদ নয় বিজেপির সদস্য পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তিনি, এমনটাই দাবি করেছেন মল্লিকা। এদিকে এই ঘটনাকে নৈতিক ও সত্যের জয় বলে উল্লেখ করেছেন বিজেপি নেতৃত্বরা।

প্রসঙ্গত, বালুরঘাট শহর লাগোয়া ডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল বিজেপি সদস্যরা। সেই অনাস্থা প্রস্তাব পরিকল্পিতভাবে বালুরঘাটের বিডিও ভেস্তে দেয় বলে অভিযোগ তোলে বিজেপি। এই ঘটনা নিয়ে বিজেপি নেতা সুভাষ সরকারের সাথে বচসাও হয় বালুরঘাটের বিডিওর। অভিযোগ সেই সময় বিডিওকে চেয়ার ছুড়ে মারে বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার। আর এই ঘটনায় ৫৩ দিন জেল হেফাজতে থাকার পর হাইকোর্টের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পান ওই বিজেপি নেতা। এরপরই বিজেপির পক্ষ থেকে ডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের অনাস্থা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দেয় ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের অনাস্থা প্রস্তাব ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে করতে হবে। এমনকি আদালত আরও নির্দেশ দেয় যে, পঞ্চায়েত অফিসে কোনোভাবেই অনাস্থা সভা করা যাবে না। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সেখানে থাকতে হবে এমন নির্দেশও দেয় হাইকোর্ট। আর এই খবর পেতেই আগেভাগে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বিডিওর কাছে আবেদন করেন পঞ্চায়েত প্রধান। এদিন প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপপ্রধানের হাতে দায়িত্ব ভার তুলে দেওয়া হয়েছে।

জানাগেছে, ডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা ২০টি। যার মধ্যে বিজেপি ১১, তৃণমূল ৬, বামফ্রন্ট ৩। ২০২১ সালে বিজেপির প্রধান তৃণমূলে যোগদান করলে বিজেপির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১০। অন্যদিকে ২০২২ সালের শেষের দিকে এক তৃণমূল সদস্য মারা যাবার ফলে তৃণমূলের বর্তমান সদস্য ৬ এবং বাম ৩। যদিও প্রধান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া মল্লিকা কর্মকার সূত্রধর জানিয়েছেন, তিনি কোনো দিনই তৃণমূলে যোগদান করেননি। প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া পর বিজেপির সদস্য পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন। যার কারণে এখন আর কোনো দলেই নেই তিনি।

যদিও বিজেপির উপ প্রধান সুভাষ সরকার জানিয়েছেন, অনেক দিন আগেই প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়েছিল, যে অনাস্থা সভা ভেস্তে দেওয়া হয়। অবশেষে
হাইকোর্টের নির্দেশে অনাস্থার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগে প্রধান ইস্তফা দেন। আজকে প্রধানের দায়িত্বভার তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই জয় বিজেপির জয়। কারণ প্রধান অনেক দিন আগেই তৃণমূলে যোগদান করেছে এবং তাদের সাথেই কাজ করছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *