পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরতেই জেলায় বিপুল হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, সহযোগিতার আহ্বান স্বরাষ্ট্রসচিবের

রাজেন রায়, কলকাতা, ২৭ মে: কেন্দ্র-রাজ্য সবুজ সঙ্কেত মেলায় দু’মাস পরে বিশেষ শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমে ভিনরাজ্য থেকে এবার ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। আর তারা ঘরে ফেরা শুরু করতেই যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। আগে যেখানে গড়ে ১০০ জন সংক্রামিতের হদিশ পাওয়া যেত, এখন সেখানে গড়ে ২০০ জনের হদিশ মিলছে। তাঁরা পৌঁছনোর পরেও রাজ্য ঠিকঠাক স্বাস্থ্যপরীক্ষার দাবি করলেও তা যে আদৌ হচ্ছে না, তা প্রথমে দাবি করেছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরাই। এবার তা মেনে নিয়ে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমেই পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছেই সহযোগিতার দাবি করলেন স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত, পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফেরা শুরু করতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা এবং মুশির্দাবাদে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, ইটাহার, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, করনদিঘি, চাকুলিয়া, চোপড়া সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একই ছবি ধরা পড়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের তরফেই অভিযোগ উঠেছে, ভিন রাজ্য থেকে এলেও সামান্য থার্মাল চেকিং ছাড়া আর কোনওরকম পরীক্ষা করা হচ্ছে না তাদের। কর্ণাটক থেকে ফেরা শেখ কুতুবউদ্দিন নামে মুশির্দাবাদের এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, পরিবারকে রক্ষা করার জন্য আমরা সব পরীক্ষা করাতে রাজি ছিলাম। কিন্তু তাপমাত্রা মাপা ছাড়া কিছু করা হয়নি। কেরল থেকে ফেরা মহম্মদ রাতুল শেখ বলেন, ‘আমাদের জন্য প্রশাসন বা ব্লকের তরফে কোনও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। নিজেদের উদ্যোগে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। এমনকি প্রশাসনের তরফে কোনও খাবার দেওয়া হচ্ছে না, বাড়ির লোকেরাই দিয়ে যাচ্ছে।’

এভাবেই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভিনরাজ্য ফেরত ৮০ শতাংশ শ্রমিকেরই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ৷ মহারাষ্ট্র থেকে আসা শ্রমিকরাই সবথেকে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে। জানা গিয়েছে, সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা হাওড়া জেলায়৷ কয়েক দিন আগেই ১৪৪ জন মহারাষ্ট্র থেকে ফিরলে তাদের ৭৬ জনের শরীরে মেলে করোনা ভাইরাস। একই ভাবে বীরভূম, মালদা থেকে মুশির্দাবাদেও করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকদেরও করোনা ভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।

আমফান ঝড়ের দাপটে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যে ট্রেন আসা সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল৷ মঙ্গলবার নবান্নে স্বরাষ্টেরসচিব জানান, মোট আয়োজন করা ২২৫টি ট্রেনের মধ্যে ১৯টি এসে গিয়েছিল। বুধবার রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ফিরছে আরও ২১টি ট্রেন। প্রতি ট্রেনে গড়ে ১২০০-১৬০০ যাত্রী থাকবেন। তবে একই সঙ্গে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, আমফান ঝড়ের দাপটে বিপর্যস্ত রাজ্যকে স্বাভাবিক করতে এই মুহূর্তে ব্যস্ত রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু মানবিকতার খাতিরে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে রাজ্যে বিপুল হারে পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে আসায় সকলকে ঠিকঠাক স্ক্রিনিং করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রমিককে ব্যক্তিগত ভাবে নিজের ও তার পরিবারের স্বার্থে নিজের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে অসুস্থ মনে করলে প্রশাসনকে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষজনকেও পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে বলে জানান তিনি। এখন প্রশ্ন হল, একের পর এক বিপর্যয়ে জেরবার হয়ে নিজেদের অপারগতা কি মেনে নিল পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *