আমাদের ভারত, ৯ এপ্রিল: রবীন্দ্র সরোবরের একাংশ একটি ক্রিকেট ক্লাবকে ইজারায় দিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কথাটি চাউর হতেই সরোবরপ্রেমী সমস্ত মানুষ স্বভাবতই রুষ্ট।
একটি হেরিটেজ অঞ্চলের জমি কোন সূত্রে একটি ক্লাবকে ইজারায় দেওয়া যায়, প্রশ্ন উঠছে! এই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে বেশ কিছু মানুষ একত্রিত হয়েছে। অতি সত্বর এই হস্তান্তর রদ করার দাবি জানিয়ে ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে।
সরোবরপ্রেমী সমীর বোস জানিয়েছেন, “এখানে সংশ্লিষ্ট ছবিতে যে ত্রিকোণাকৃতি (লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত) অঞ্চলটি দেখা যাচ্ছে সেটি হলো বালিগঞ্জের দিকের সরোবরের প্রায় দক্ষিণ প্রান্তে ওই এবিবিএ ক্রিকেট কোচিং সেন্টার। অভিযোগ, এর লাগোয়া কোনাচে জমিটি’কে এমডিএ হস্তান্তর করতে চলেছে। অথচ, এই সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ের সিংহভাগ জাতীয় তহবিল থেকে আসে, কারণ এটি একটি জাতীয় সরোবর।
পরিবেশবিদ সোমেন্দ্র মোহন ঘোষ জানান, বহুদিন ধরে রবীন্দ্র সরোবর কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তের ফুসফুস নামে অভিহিত। এটি আবার জাতীয় সরোবরও বটে। কয়েক বছর আগে এই সরোবর অঞ্চলকে ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে স্বীকৃতি জানানো হয়। সরোবরটি একটি সমৃদ্ধ এবং অতি সংবেদনশীল ‘ইকোস্ফিয়ার’-এর আশ্রয়। এহেন জাতীয় সরোবর আজ মৃতপ্রায়।
এর জলের উচ্চতা দিনদিন নিম্নমুখী। ভুল এবং অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণকে এর জন্য অনায়াসেই দায়ী করা যায় এই সরোবরের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনকে। বারংবার সরোবর প্রেমী ভ্রমণকারীদের পক্ষ থেকে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করা হয় সরোবরের অস্তিত্ব বিপন্নকারী বিভিন্ন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে।
তাদের পর্যবেক্ষণে আদালত বারংবার বলেছে যে রবীন্দ্র সরোবরের অতিসংবেদনশীল ইকোস্ফিয়ার বিঘ্নিত হয় এমন কোনও সামাজিক ও ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ এই পরিসরে নিষিদ্ধ।
পরিবেশবিদ সমীর বোস জানিয়েছেন, এমনিতেই এই সরোবরের জমিদারী চালানো ক্লাবগুলো আদালতের রায়কে পাশ কাটিয়ে উপরমহলের প্রচ্ছন্নমদতে শব্দকল্পদ্রুমের মত বিদঘুটে আওয়াজ করে বর্ষবিদায়-বর্ষবরণে মাতোয়ারার ফোয়ারাতে নিমজ্জিত হতে পছন্দ করে। প্রতিবাদের ফল হয় কাকস্য পরিবেদনা। ভাবখানা এমন, ‘হেরিটেজ সাইট’ ‘ইকোস্ফিয়ার জোন’ এসব কী কাজে লাগে? সরোবরকে ব্যবসায়িক কাজে লাগানো হবে না, তাই কি হয়?