বর্ধমানে এসে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব রাজ্যপাল

আমাদের ভারত, বর্ধমান, ৪ জানুয়ারি: বর্ধমানের পুজো দিতে এসে রাজ্য সরকারকে একহাত নিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বর্ধমান শহরের ১০৮ শিব মন্দিরে পুজো দিতে যান সস্ত্রীক রাজ্যপাল। সেখানে পুজো দেওয়ার পর তিনি বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজো দেন। পরে বর্ধমানের সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য সরকারকে একহাত নেন তিনি।

রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যজুড়ে সিন্ডিকেট রাজ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে বালি কয়লা পাথর পাচারের কাজ। হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বালি পাথর কয়লা পাচার চলছে। যারা বালি পাথর কয়লা পাচার করছে টাকার বিনিময়ে তাদের একটা স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে স্লিপ দেখালে রাস্তায় পুলিশ তাদের আটকাবে না। এটাকে তিনি মাফিয়ারাজ বলে কটাক্ষ করেন। পুলিশ প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে এই রাজ্যে কাজ করতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ তুলে রাজ্যপাল বলেন, পুলিশ প্রশাসনের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। যেটা গণতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক ব্যাপার।

আমফানে ত্রাণ বিলির কথা তুলে ধরে রাজ্যপাল সমালোচনা করে বলেন, আপনার জেলাতে যাদের বাড়িঘর রয়েছে তাদের আমফানের ত্রাণ দেওয়া হয়েছে? তিনি প্রশ্ন তোলেন আমফানের ত্রাণ দিয়েও কি ঘরের আলমারি ভরা যায়। অনেকেই বলেছে ভুল করে তারা ত্রাণ নিয়েছে। এইভাবে ভুল করে ত্রাণ নেওয়াটাও অপরাধ। বিষয়টি জানার পরও প্রশাসন কেন নিশ্চুপ তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। রাজ্যপাল বলেন, এই ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার। এটা জানিয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। আমি তদন্তের রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেই রিপোর্ট আজও হাতে পাইনি। রেশনের চাল বিলির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা রেশনের স্লিপ বিলি করছে তারা কারা।

ডায়মন্ডহারবার হারবার প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাজ্যপাল বলেন, ডায়মন্ড হারবারে যখন গিয়েছিলাম সেখানে কিন্তু প্রটোকল মানা হয়নি। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কি কারো জায়গীর আছে? জানিনা কেন ডায়মন্ডহারবারকে এত প্রাধান্য দেওয়া হয়। আমি এই রাজ্যের রাজ্যপাল। কিন্তু ডায়মন্ডহারবারে কি দেশের নিয়ম মানা হয় না প্রশ্ন তোলেন তিনি। এরপর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমি ফের ডায়মন্ডহারবার যাবো।

কেন্দ্রীয় কৃষক নিধি প্রকল্প কেন চালু করা হলো না সেই প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উত্তর চেয়েছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি তিনি বলেন, রাজ্যের কৃষকেরা ৯৮০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কৃষকদের এইভাবে কেন বঞ্চিত করা হল সেই জবাব কে দেবে। তিনি আরও বলেন, পয়লা এপ্রিল থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চাল-ডালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কিন্তু গণবণ্টন ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলের দখলে চলে গিয়েছিল। কৃষকদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যেখানে দেশের কৃষকেরা ৬ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ৭০ লক্ষের বেশি কৃষক এই টাকা পায় না।

এদিন সাংবাদিকদের রাজ্যপাল বলেন, পশ্চিমবঙ্গের চিত্র বদলাতে চাই। ভোট আসা মানেই একটা রাজনৈতিক হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়। এটা কিন্তু ঠিক নয়। রাজ্যে যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করা যায় তার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *