মিলন খামারিয়া, আমাদের ভারত, শিলিগুড়ি, ১০ এপ্রিল: সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভারতীয় কিষাণ সংঘ পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে। বিজাতীয় বামপন্থী ভাবধারাকে স্ব-মূলে উৎখাত ক’রে ভারতীয় সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে তারা এগিয়ে চলেছে। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা দত্তপন্থ বাপুরাও ঠেংরি ১৯৭০ -এর দশকে বলেছিলেন- বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে বামপন্থী বিচারধারার প্রচার ও প্রসার হলেও আগামী দিনে তা বিশ্ব থেকে মুছে যাবে। সেই ভবিষ্যতবাণী সত্যি হচ্ছে। ভারতে বামপন্থী বিচারধারা অবলুপ্তির দিকে, পশ্চিমবঙ্গেও প্রায় শূন্য তারা। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি ও পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিকে আবার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মাঠে নামছে ভারতীয় কিষান সংঘ – বলে জানান সংগঠনের অখিল ভারতীয় সভাপতি সাই রেড্ডি।
এই জন্য তারা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেছেন। সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে তারা এই সংগঠনের পাঁচ রাজ্যের প্রান্ত বা রাজ্যস্তরের প্রমুখ কার্যকর্তাদের নিয়ে দু’দিনের(৮ ও ৯ ই এপ্রিল) প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল শিলিগুড়ির ‘ঋষি ভবন’-এ। পশ্চিমবঙ্গ ১৫, ওড়িশা ৯, মণিপুর ৫, অসম ৮, সিকিমের ৫ জন মিলিয়ে মোট ৪২ জন এই প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন।বর্তমানে এই সংগঠনের সারা ভারতে সদস্যের সংখ্যা ৪৩ লক্ষ, যা ভারত তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো সংগঠন।
৮ই এপ্রিল শুরুতেই ভারতীয় কিষাণ সংঘের পতাকা উত্তোলন করার পর ভারতমাতা, ভগবান বলরাম ও দত্তপন্থ বাপুরাও ঠেংরির ছবিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়।
এই শিবিরে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ নিয়ে যেমন আলোচনা হয় তেমন গ্রাম সমিতির স্ব-শক্তি করণের মাধ্যমে কৃষকদের লাভকারী মূল্যের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও বলা হয়। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক হাজার গ্রামে গ্রাম সমিতি গঠন করে ফেলেছেন তারা। গ্রাম সমিতি গুলিতে পুরুষের পাশাপাশি মহিলা প্রমুখদের দিয়েও কাজ শুরু করেছেন। মহিলারা গ্রামের মেয়েদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করবেন।
অখিল ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মোহিনী মোহন মিশ্র অধিক অধিক গ্রামে গ্রাম সমিতি গঠনের জন্য বিশেষ জোর দেন। তিনি বলেন, গ্রাম সমিতি স্ব-শক্ত করতে হবে। সমাজ পরিবর্তনে গ্রাম সমিতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। শক্তিশালী গ্রামই পারে কৃষকদের অবস্থার পরিবর্তন করতে। গ্রাম সমিতির প্রতিটি কার্যকর্তাকে আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। গ্রামের ‘যুব প্রমুখ’ যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষি কাজের পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতি প্রসারের কাজে যুক্ত করবেন। যুবক-যুবতীরা সংস্কৃতি, পরিবেশ, জল সংরক্ষণ, গ্রামের বয়স্কদের সেবা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে। মূল উদ্দেশ্য হল বামপন্থী বিচারধারা বিলুপ্ত করে ভারতীয় সংস্কৃতি ও বিচারধারার প্রতিষ্ঠা ক’রে সংগঠনের দ্রুত বৃদ্ধি করা।
সংগঠনের অখিল ভারতীয় কোষাধ্যক্ষ যুগল কিশোর মিশ্র বলেন, ভারতীয় কিষাণ সংঘের কার্যকর্তারা প্রতিটি কৃষকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করবেন। তাদের সমস্যা সম্পর্কে জানবেন এবং তার সমাধান কীভাবে ও কোথায় গেলে করা সম্ভব, সে-সব জানাবেন। তাতে সংগঠনের পরিচিত বাড়বে এবং কৃষকরা আমাদের সাথে জুড়ে যাবেন।
অখিল ভারতীয় সহ-সংগঠন সম্পাদক গজেন্দ্র সিং চৌহান ‘সংগঠন’ নিয়ে আলোচনা করেন। কীভাবে সংগঠন বাড়ানো যায়, তার জন্য কী পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত; কীভাবে সদস্য বাড়ানো যায়- এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
উত্তর ও উত্তর-পূর্বের সংগঠন সম্পাদক শ্রীনিবাস ‘পঞ্চ পরিবর্তন ও সমাজ পরিবর্তনে ভারতীয় কিষাণ সংঘের ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সামাজিক সমরসতা, কুটুম্ব প্রবোধন, অনুশাসন, স্বাভিমান ও স্বদেশী – এই পঞ্চ পরিবর্তন আমাদের করতে হবে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ – এই দৃষ্টি নিয়ে কাজ করছে। সমাজের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করতে হবে। সবাইকে আত্মীয় ভাবতে হবে। নাগরিক কর্তব্য পালন করতে হবে। নিজের দেশের দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় এবং দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে আলোচনা ও গর্ব করতে হবে। পর্যাবরণের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। এই কাজের সাথে সমাজের প্রতিটি মানুষকে জুড়তে হবে। তাহলেই সমাজ পরিবর্তন হবে বলে জানান তিনি।
দু’দিনের এই শিবিরে রাজ্য বা প্রান্ত স্তরের কার্যকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। এরাই পরে জেলা, সমষ্টি ও গ্রামে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন কার্যকর্তাদের। কৃষকদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করবেন।
এই শিবিরে প্রমোদ নাথের লেখা ও জীবন রাণার অনুবাদ করা ‘মগর জনজাতি সমাজ অর সংস্কৃতি’ এবং ড: শরণ কুমার রিজাল ও ড: গণেশ দাসের লেখা ‘গোলমরিচ চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ’ – এর উপর বই দুটি প্রকাশ করা হয়।