হাতি মানুষ সংঘাত এড়াতে আরও তৎপর বনদফতর, জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হাতির হামলায় মানুষ মৃত্যুর সংখ্যা কমলো

আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ৭ ডিসেম্বর: মানুষ বন্যপ্রাণী সংঘাত এড়াতে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন গ্রাম বনবস্তিগুলিতে আর সক্রিয়তা বাড়াল বনবিভাগ। সাম্প্রতিক বুনোহাতির হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার জয়েন্ট ফরেস্ট প্রটেকশন কমিটিগুলির থেকে মোট ৫০টি টহলদারি দল কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও বুনোহাতির হামলা থেকে ফসল, বসত বাড়ি রক্ষায় রাতে মোট ৮৮টি ওয়াচ-টাওয়ার সক্রিয় থাকছে। পাশাপাশি বুনোহাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০কিমি লম্বা পাওয়ার ফেন্সিং দেবার কাজ শেষ হয়েছে। বুনোহাতির গতিবিধি জঙ্গলে সীমাবদ্ধ রাখতে ৬০হেক্টর জমিতে ট্রি ফডার প্ল্যানটেশনের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে বনদপ্তরের তরফে জানাগেছে, জলদাপাড়ায় ৮টি রেঞ্জ এলাকার মধ্যে সর্বাধিক বুনোহাতির উৎপাত কোদালবস্তি রেঞ্জ ও মাদারিহাট রেঞ্জে। সেখানে ১০টি করে মোট ২০টি টহলদারি দল সক্রিয় রয়েছে। জলদাপাড়া ওয়েস্ট রেঞ্জ ধরে সর্বাধিক ৪৬টি ওয়াচ টাওয়ার সক্রিয় রয়েছে। বুনোহাতির গতিবিধি নজরে রাখতে দিনে রাতে মনিটরিং চলছে। জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও কুমার বিমল বলেন,”আপাতত প্রায় ৭০কিমি পাওয়ার ফেন্সিং কাজ করছে। পাশাপাশি সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে পেট্রলিং নিবিড় করা হয়েছে।বন্যপ্রাণী লোকালয়ে আসছে, তবে গত বছরের তুলনায় এবছর এখনও পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু অনেক কম। সারা বছরই আমরা বিভিন্নভাবে প্রচার অভিযান করে যাচ্ছি।”

জানা গেছে, এবছর এখনও পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর হামলার জেরে ক্ষতিপূরণ বাবদ একটা বড় অর্থ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘরবাড়ির ক্ষতি হওয়ার জন্য প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হওয়ার জন্য প্রায় ৮৮ লক্ষ্য টাকা, গৃহপালিত জন্তুর ক্ষতি হওয়ার জন্য প্রায় ৮ লক্ষ্য টাকা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, বক্সা ও গরুমারার মাঝে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। সারাবছর হাতিদের অবাদ যাতায়াত ডুয়ার্সের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে অথবা উল্টোটি। তবে হাতিদের প্রায় সব করিডোরই অবরুদ্ধ। হাতিদের স্বাভাবিক করিডোরগুলিতে তৈরি হয়েছে মানুষের বসতি। অনেক সময় দলছুট হাতি দিক ভুল করে শহরেও ঢুকে পড়ছে।এলাকায় হাতির হামলার আশঙ্কা থাকলে দ্রুত বনদপ্তর টহলদারি করছে এমন দলগুলির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে। এতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেকটাই কমানো যায়।

জলদাপাড়া বনবিভাগের সহ বন্যপ্রাণ সহায়ক দেবদর্শন রায় বলেন,”বুনো হাতির গতিবিধি আগাম আঁচ পাওয়া যথেষ্টই কঠিন। তবে স্থানীয় মানুষ যদি সচেতন হন, বনদপ্তরকে সহযোগিতা করেন তবে বনকর্মীদের কাজ সহজ হয়ে যায়।” উল্লেখ্য, জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটিগুলিকে বনদপ্তরের দিক থেকে আয়ের লভ্যাংশের একটি অংশ দেওয়া হচ্ছে।টহলদারি টিমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকছে নির্দিষ্ট রেঞ্জগুলির।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান, হাতির সংখ্যা বাড়লেও জঙ্গলের আয়তন বাড়েনি। ফসল কাটার মরসুমে মানুষ আরও একটু সচেতন থাকলে অনেকটা ক্ষয়ক্ষতি আটকানো যায়।হাতির হামলায় মানুষের মৃত্যু কমেছে। বিষয়টিকে বনদপ্তরের সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *