পঞ্চসায়র গণধর্ষণ কাণ্ডের ৫ দিন পর গ্রেফতার অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালক, দ্বিতীয়জনের সন্ধানে পুলিশ

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৭ নভেম্বর : শেষ পর্যন্ত পঞ্চসায়র গণধর্ষণ কাণ্ডে ৫ দিন পর উত্তম রাম নামে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আটক ব্যক্তি পেশায় ট্যাক্সিচালক। শনিবার রাতে নরেন্দ্রপুর থানার গঙ্গাজোয়ারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উত্তমের ট্যাক্সিটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই ট্যাক্সিচালককে জেরা করে তার সঙ্গীর খোঁজ পেতে চাইছে পুলিশ।

গণধর্ষণকাণ্ডের তদন্তে নেমে একাধিক সিসিটিভির ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখার পর ওই ট্যক্সিচালককে শনাক্ত করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, মহিলা হোম থেকে বেরিয়ে প্রথম অন্য ট্যাক্সি ধরেন, তখন উত্তম নিজের ট্যাক্সিতে বসে মদ্যপান করছিল। সে নিজের ট্যাক্সি চালিয়ে ওই ট্যাক্সির পিছু নেন। এরপর ওই মহিলা গড়িয়ার কাছাকাছি নামলে তাকে নিজের ট্যাক্সিতে তুলে নেয়। যদিও সে ধর্ষণ করেননি বলে দাবি করেছে। তবে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ট্যক্সিচালককে জেরা করে সেদিন রাতে কী ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে ধর্ষিতা যুবতীকে লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মেয়েটির ধর্ষণের ঘটনা শুনে শোকবিধ্বস্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তার বৃদ্ধা মা।

ঘটনার দিন রাতে ওই যুবতী কোন রংয়ের পোশাক পরেছিলেন তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মূলত ধর্ষিতার দিদির বয়ানেই এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ধর্ষিতার দিদি পুলিশের হাতে একটি রক্তমাখা হলুদ রংয়ের পোশাক তুলে দিলেও সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাতে ওই যুবতী একটি লাল রংয়ের গাউন পরেছিলেন।

নরেন্দ্রপুর থানার নতুন তথ্য ঘিরে স্বভাবতই রহস্য তৈরি হয়েছে। এর আগে হোমের মালিক ও মহিলার দিদির বয়ানে নানা অসঙ্গতি থাকায় প্রশ্ন উঠেছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, সব চেয়ে বেশি বিভ্রান্তি হয়েছে মহিলা কী পোশাক পরেছিলেন তা নিয়ে। যা তৈরি করে দিয়েছেন খোদ অভিযোগকারিণীর দিদি। মহিলার দিদি পুলিশকে একটি রক্তমাখা নাইটি দিয়ে জানান, সেটি পরেই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গড়িয়াহাটে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছে তাঁর বোন ধর্ষিতা হয়েছেন বলে দাবি করেন। পুলিশ ওই নাইটিটি সিজ়ার তালিকায় রাখলেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তিনি একটি লাল রঙের গাউন পরে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই হোম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তা হলে হলুদ নাইটি এল কোথা থেকে?

মহিলার দিদি এর পরে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে জানান, তাঁর বোন জোর করছিলেন বলেই লাল রঙের ওই গাউন তিনি পুলিশকে দিতে পারেননি। আদতে বোন লাল রঙের গাউন পরেই তাঁদের আত্মীয়ের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন। তাঁর হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের মধ্যে হলুদ রঙের রক্তমাখা ওই নাইটিটি ছিল।

পঞ্চসায়রের ওই হোমটি অবৈধভাবে চালানো হচ্ছিল। আবাসিকদের নিরাপত্তার কোনও বালাই ছিল না। নিরাপত্তারক্ষী বা সিসি ক্যামেরা কোনও কিছুই ছিল না সেখানে। ফলে পঞ্চসায়রের গণধর্ষণের তদন্তে নেমে পদে পদে ধাক্কা খাচ্ছিলেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। সেদিন রাতে কী ঘটেছিল, তা বুঝতে একমাত্র ভরসা ছিল হোম সংলগ্ন রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেই প্রথমে গাড়িটিকে শনাক্ত করেন লালবাজারের আধিকারিকরা। তার পরই গণধর্ষণ কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই ট্যক্সিচালকে গড়িয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, ওই ট্যক্সিচালককে জেরা করে রহস্যের কিনারা করা যাবে। ১৯ নভেম্বর নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি নেবে পুলিশ। তারপরেই ওই ট্যাক্সি চালকের সঙ্গে গাড়িতে আর কে ছিল, তা জানা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *