আমাদের ভারত, বনগাঁ, ১৭ মার্চ: করোনা আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ। তারমধ্যে নতুন এক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গোটা বনগাঁ মহকুমা জুড়ে। নারকেল পাতার রঙ পাল্টানোয় আতঙ্ক ছড়িয়েছে মানুষের মধ্যে। এরসঙ্গে করোনার যোগসূত্রও খুঁজছেন অনেকে। তবে, জেলার কৃষি দপ্তর মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বনগাঁ সহ বিভিন্ন এলাকায় কিছুদিন ধরে বিভিন্ন নারকেল গাছের পাতার রং পালটানোর খবর পেয়েছেন জেলা কৃষি দপ্তরের কর্তারা। ওইসব এলাকায় গাছের পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপকভাবে হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকার মানুষের মধ্যে। কেউ কেউ বলছে করোনা ভাইরাসের জন্য, আবার কেউ বলছে অতিমাত্রায় নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সির জন্য।
জেলা কৃষিদপ্তরের কর্তারা এলাকায় গিয়ে দেখে এসেছেন। তাঁদের মতে, এটি একটি মাছির কাজ। যার পোশাকি নাম, মিলি বার্গ ও হোয়াইটফ্লাই। এই হোয়াইট ফ্লাই গাছের পাতায় ডিম পেরে দ্রুত বংশ বিস্তার করছে। এই দুই মাছি গাছের পাতার রস চুষে খাচ্ছে বলে জানান তাঁরা। তার কারণেই পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাও এই কাজ ওই মাছিরই বলে নিশ্চিত করেছেন। ইতিমধ্যে এবিষয় নিয়ে সমস্ত ব্লক ও কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা সচেতন হয়েছে।
জেলা কৃষিদপ্তরের উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায়চৌধুরী বলেন, এটি এক প্রকার ছোট মাছি। এর আক্রমণে গাছের পাতা সহ ফলও সাদা হয়ে যায়। পরে গাছটির বাঁচার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই মাছিগুলি দ্রুত বংশবিস্তার করতে সক্ষম। আমাদের কাছে খবর আসতেই এ বিষয়ে আমরা যা যা করার তাই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা জানান, প্রথমে গাছের পাতা সাদা দেখালেও পরে পাতা পুরো কালো হয়ে যাবে। সালোকসংশ্লেষ হচ্ছে না। ধীরে ধীরে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। আমরা ভারতের অনেক বিজ্ঞানীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। আপনারা কোনো রকম গুজবে কান দেবেন না, আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই।
সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত আমারিকার বিভিন্ন শহরে ২০০৪ সালে এই মাছির আক্রমণ দেখা যায়। ভারতে প্রথম তামিলনাড়ুতে এই মাছির আক্রমণ হয় ২০১৬ সালে। এছাড়া এরাজ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে প্রথম এই মাছির আক্রমণের কথা শোনা যায়। শুরু থেকেই ব্যবস্থা না নিলে এই মাছির প্রকোপ ভয়াবহ আকার নিতে পারে। এই রঙের ব্যাপারটা রাতেই ভালোভাবে দেখা যায় বলে জানালে কৃষিবিজ্ঞানের ছাত্র ইন্দ্র মণ্ডল।
উল্লেখ্য, গত বছর পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এক ধরনের মাছির উপদ্রব দেখা দিয়েছিল। তাতে বহু নারকেল গাছ মারা গিয়েছিল। তবে নতুন ধরনের এই মাছির আক্রমণ কীভাবে ঠেকানো সম্ভব, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারেননি কৃষি বিশেষজ্ঞরা।