রাজেন রায়, কলকাতা, ২৭ জানুয়ারি: গত কয়েক দশকে পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি ভোটারদের তুলনায় অবাঙালি ভোটারদের সংখ্যা বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ। কর্মসূত্রে বহু বাঙালি নিজের জন্মভূমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন এবং সেই অবাঙালি ভোটারদের হাতিয়ার করে নিজেদের রাজনৈতিক জমি শক্ত করেছে বিজেপি। মুসলিম ভোটারদের দিকে আলাদা নজর দিলেও এবার বিজেপির প্রধান শক্তি অবাঙালি ভোটারদের মন বুঝতে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ তৃণমূল ভবনে বিশেষ বৈঠকে বসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভারতের হিন্দি বলয়ে বিজেপির ক্ষমতা থাকলেও কিন্তু দক্ষিণ ভারত অথবা পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশায় সার্বিকভাবে বিজেপি রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তাই বাঙালি ভোটারদের পাশাপাশি অবাঙালি ভোটারদের একের পর এক কর্মসূচি নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে হিন্দিভাষী সংগঠনের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে বসতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
কলকাতা তথা পার্শ্ববর্তী বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা বিপুল। বলা যায় জনসংখ্যার নিরিখে কলকাতা পুরসভা এলাকায় অবাঙালি মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ। কলকাতা লাগোয়া অঞ্চলেও হিন্দিভাষী মানুষের সংখ্যা বিপুল। বলাবাহুল্য অবাঙালি ভোটের একটা বড় অংশ বহুকাল ধরেই পেয়ে আসছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোট বৃদ্ধি আরও বড় আকারে হয়েছে তাদের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন হিন্দিভাষী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের মতামত বা ক্ষোভ অভিমানের কথা জানতে এবং সেই অনুযায়ী রাজ্য প্রশাসনের তরফে কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে। কারণ এই বিপুল ভোট পুরোটাই যদি বিজেপির দিকে চলে যায়, তাহলে কলকাতার প্রতিটি আসনে লড়াই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে তৃণমূলের কাছে। প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যোগ দিয়ে আসছেন বহু বছর ধরেই। সেখানে ছটপুজোসহ অন্যান্য অবাঙালি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সবসময় যোগ দিয়ে থাকেন। তারপরও দেখা যাচ্ছে সেই ভোটের বড় অংশ পাচ্ছে বিজেপি। কেন এমনটা হচ্ছে, সেই উত্তর নিজেই খোঁজবার দায়িত্ব এবার তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।