অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, কলকাতা, ৫ ফেব্রুয়ারি: সংগঠনের শতবর্ষে হিন্দুত্ব প্রসঙ্গে আরও সতর্ক এবং সক্রিয় হবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। বিভিন্ন জায়গায় পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রচার অভিযান শুরু করবে সঙ্ঘ। সেই পাঁচ বিষয় হল স্ব-আধার, সামাজিক কাঠামো, কুটুম্ব প্রবোধন, পর্যাবরণ এবং নাগরিক কর্তব্য। এগুলোর প্রতিটিতেই মাত্রা পাবে হিন্দুত্ব এবং ভারতীয়তা। প্রসঙ্গত, ১৯২৫-এর ২৭ সেপ্টেম্বর গঠিত হয়েছিল আরএসএস।
বুধবার সঙ্ঘের পূর্ব ক্ষেত্র সহ প্রচার প্রমুখ ডঃ জিষ্ণু বসু সাংবাদিকদের বলেন, “আরএসএস বরাবরই মনে করে প্রত্যেক হিন্দু আমরা ভাই। কোনও হিন্দু পতিত হতে পারে না। এটা আমাদের বহু পুরনো বিশ্বাস। ১৯৩৫ সালে ওয়ার্ধায় মহাত্মা গান্ধী অনুভব করেছিলেন সঙ্ঘই একমাত্র সমস্ত জাতিকে একসূত্রে ধরে রাখতে পারে। একথা উনি লিখেও গিয়েছেন। জাতিভেদ প্রথা ক্যান্সারের মতো।”
ধর্মান্তরিত হিন্দুদের কি ফের হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে জিষ্ণুবাবু স্বামী বিবেকানন্দের প্রাসঙ্গিক উক্তির উল্লেখ করেন। বলেন, কেবল হিন্দু নয়, বিশ্বের নানা স্থানে অন্য ধর্মের লোকও ধর্মান্তরিত হয়েছে। জাতিভেদের নামে পূর্ববঙ্গে এক সময়ে কী অসহনীয় অত্যাচার হয়েছে, তা আমরা জানি। সঙ্ঘ লাগাতার কাজ করবে জাতিভেদ প্রথা সমূলে বিনাশ করার জন্য।
সঙ্ঘের ১০০ বছর উপলক্ষে সংগঠনের তরফে দেশজুড়ে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হবে। জিষ্ণুবাবু বলেন, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড অথবা রামলীলা ময়দানে বড় সমাবেশ হবে কিনা, তা ঠিক হয়নি। কিন্তু আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষ তৈরির কাজে আরও বেশি করে আত্মনিয়োগ করবে। ধর্মের পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হবে ভারতের পরিবার ব্যবস্থা বাঁচিয়ে রাখা, স্ব-বোধ, স্ব-উৎপাদন, স্বদেশী— এসব ভাবনার ওপর। সেই সঙ্গে মাত্রা পাবে পরিবেশ চেতনা বৃদ্ধির। এসবের জন্য প্রতিটা গ্রামে গিয়ে প্রচার চালানো হবে।
প্রস্তাবিত প্রচারসূচিতে থাকছে নাগরিক কর্তব্যের বিষয়টিও। জিষ্ণুবাবু এ কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ভারত বিশ্বগুরু হবে। কিন্তু আমাদের দেশবাসীর কী কর্তব্য, কতটা দায়িত্ব পালন করা আবশ্যিক, সে সব নিয়ে ব্যাপক জাগরণ প্রয়োজন।”
আধুনিকতার জোয়ারে পারিবারিক কাঠামো ভেঙে যাচ্ছে। ভারতীয়ত্বর বদলে অনেকে পশ্চিমী জীবনধারায় আকর্ষণ বোধ করছেন। জিষ্ণুবাবু এ ব্যাপারেও স্বামীজীর পরিবারের ভাবনার উল্লেখ করেন। বলেন, “গোটা দেশে, বিদেশেও স্বীকৃতি পেয়েছে ভারতের পরিবার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা অনেককে অনেক বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে। এই জীবন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামো রক্ষা করতে সক্ষম। অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে, পরিবারের কোনও সদস্য সঙ্কটে পড়লে অন্যরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বহু যুগের রক্ষাকর্তা এই পরিবার-প্রবোধন।”
বুধবার জিষ্ণুবাবু রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের আঞ্চলিক সদর দফতর কেশব ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ১২ই পর্যন্ত সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত থাকবেন সঙ্ঘের ‘দক্ষিণবঙ্গ প্রবাসে’। ৭-১০ ফেব্রুয়ারি সঙ্ঘের কার্যকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করবেন। এরকম নানা সূচির মধ্যেই প্রবুদ্ধ ব্যক্তি, প্রবীন স্বয়ংসেবকদের সঙ্গে কথা বলবেন সঙ্ঘপ্রধান।