আমাদের ভারত, ১ মার্চ: তারকেশ্বরের মহাদেবের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে আরামবাগের জনসভায় বক্তব্য রাখতে শুরু করেন মোদী। বাংলায় সম্বোধন করেন রাজ্যবাসীকে। শুরুতেই বলেন, মাতৃশক্তিকে শক্তি যোগায় যে বঙ্গ, তাকে প্রণাম। কাছেই খানাকুলে রাজা রামমোহন রায় জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি সমাজ সংস্কারক, তাঁর প্রেরণাতেই ভারতে নারী শক্তির উদয় বলে তাঁকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, খানাকুলকে প্রণাম করি। তারপরেই ধন্যবাদ জানান জনতাকে। বলেন, এত বিপুল সংখ্যক মানুষ এসেছেন সকলকে প্রণাম। একই সঙ্গে সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলে তিনি, চোটের জবাব ভোটে দিতে হবে বলে আহ্বান জানান।
মোদী জানান, কিছুক্ষণ আগে ৭০০০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। এরজন্য রাজ্যবাসীকে অভিনন্দন। তারপরেই দেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, গত দশ বছরে ভারতীয় অর্থনীতি ১১ নম্বর থেকে ৫ নম্বরে উঠে এসেছে। জি-টোয়েন্টিতে দেশের জয় জয়কার হয়েছে। মহাকাশ গবেষণাতেও ভারত যা করেছে তা কেউ করতে পারেনি। ভারতের চন্দ্রযান তা করে দেখিয়েছে। ক্রীড়া জগতে নতুন রেকর্ড করেছে ভারত।
মোদীর আজ কথায় অযোধ্যার মন্দিরের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ৫০০ বছর পর ঘর পেয়েছেন রাম লালা। নিজের মন্দিরে বিরাজমান বিগ্রহ। পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে রামলালাকে স্বাগত জানানো হয়েছে, রামের প্রতি যে আস্থা বাংলা তাদের দেখিয়েছে তাতে দেশ প্রভাবিত হয়েছে।
এরপরই সন্দেশখালির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বাংলার অবস্থা আজ গোটা দেশ দেখেছে। মা মাটি মানুষের যে ঢোল পেটায় তৃণমূল তা ফেটে গেছে। সন্দেশখালির বোনেদের সঙ্গে যা করেছে তা দেখে দুঃখিত দেশ। রাজ্যে মহিলাদের নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যা হচ্ছে সন্দেশখালিতে তাতে রামমোহন রায়ের আত্মা কাঁদছে, যার জন্ম এই খানাকুলে। তিনি বলেন, তৃণমূল নেতা সন্দেশখালিতে দুঃসাহসের সমস্ত সীমা পার করেছে। ওখানকার মহিলারা মমতা দিদির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। পাল্টা অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে সরকার বাঁচানোর জন্য জোর দিয়েছে। বিজেপি নেতারা রাতদিন মা-বোনেদের সম্মানের জন্য লড়াই করেছেন। লাঠির আঘাত সয়েছে। অবশেষে বৃহস্পতিবার বাংলার পুলিশ আপনাদের সামনে মাথা নত করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এরপরই তিনি বলেন, এ তৃণমূলকে কি ক্ষমা করবে? সব চোটের জবাব ভোটে দিতে হবে। বাংলার লোক দিদিকে বলছে কিছু লোকের ভোট সন্দেশখালি থেকেও আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
মোদীর কথায় উঠে এসেছে জোট ইন্ডিয়ার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, জোটের অনেক নেতা সন্দেশখালি প্রসঙ্গে নাক, কান, মুখ বন্ধ করে বসে রয়েছেন। গান্ধীজীর তিন বাঁদরের মতো। পাটনা, ব্যাঙ্গালুরু আর কোথায় কোথায় এরা একসঙ্গে বসে বৈঠক করেনি, অথচ বাম এবং কংগ্রেস এখনকার মুখ্যমন্ত্রী থেকে জবাব চাওয়ার সাহস করছেন কি? সন্দেশখালির এই বোনদের মতামত একবারও দেখা হয়নি। তাঁর কথায়, কংগ্রেস যা বলেছে শুনলে চমকে যাবেন। কংগ্রেসের সভাপতি বলেছেন বাংলায় এসব চলতেই থাকে। এটা কি বাংলার অপমান নয়?
মোদী বলেন, শিক্ষক নিয়োগ থেকে পুরসভা নিয়োগ সব জায়গাতেই দুর্নীতি করেছে তৃণমূল। গরিবদের রেশনে দুর্নীতি, সীমানা দিয়ে পশু পাচার সবেতেই দুর্নীতি। সেই কারণে তৃণমূলের মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে নোটের পাহাড় বেরিয়ে এসেছে। এর আগে এত বড় নোটের পাহাড় দেখেছেন? সিনেমাতেও দেখা যায় না।
প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, দুর্নীতিতে জর্জরিত বলেই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের বিরুদ্ধে ধর্না হয় এখানে।
রানীগঞ্জে কয়লা খনির কাজ ছয় বছর আগে শুরু করা হয়েছে। ১৮ হাজার কোটি টাকার কাজ। সে কাজ আটকে রয়েছে। এই নিয়েও রাজ্যের দিকে আঙ্গুল তোলেন মোদী।
মোদী বলেন, সংকল্প নিয়েছি, পশ্চিমবঙ্গ বিকশিত হলে ভারতের উন্নয়ন হবে। সে কারণে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের সকল আসনে কমল ফোটার প্রয়োজন। এরপরে তিনি স্লোগান দেন, অবকি বার ৪০০ পার।
শুক্রবার সরকারি এবং রাজনৈতিক দুই কর্মসূচিতে যোগ দিতে দু’দিনের পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার সরকারি কর্মসূচির পর হুগলির আরামবাগের জনসভায় রয়েছেন তিনি। এরপর শনিবার তাঁর জনসভা করার কথা কৃষ্ণনগরে। সেখানেও রাজনৈতিক সমাবেশের আগে বেশ কিছু সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।