আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, ৫ ডিসেম্বর: উনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের পর থেকেই প্রচারের আলোতে আসে বীরভূমের তারাপীঠ। ধীরে ধীরে মা তারার ভক্ত দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে। বিশেষ দিনে ভক্ত সমাগম লক্ষাধিক হয়। আর কৌশিকী অমাবস্যায় পাঁচ লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় তারাপীঠে। ভক্ত সমাগমের নিরিখে তারাপীঠের উন্নতি হয়েছে অনেক। তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদ গড়ে উন্নয়নের ধারা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু মাত্র তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরত্বে উদয়পুরের বহু প্রাচীন শিব মন্দির প্রায় ধ্বংসের মুখে। ভেঙ্গে পড়েছে শিবলিঙ্গ। মন্দিরের চূড়ায় জন্মেছে বিশাল এক বটবৃক্ষ। দিনের পর দিন রক্ষবণাবেক্ষণের অভাবে লুপ্তপ্রায় মন্দিরের টেরাকোটার কাজ।
তারাপীঠ থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম উদয়পুর। এই গ্রামের ডাকাত কালীর নাম শুনলে আজও গা শিউরে ওঠে এলাকার মানুষের। সেই গ্রামের ঢোকার পূর্ব দিকে আছে তিনটি শিব মন্দির। যাদের নাম রামেশ্বর, ঘগেশ্বর ও গৌরীকান্ত। প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি হবে উদয়পুরের বন্দ্যোপাধায় পরিবারের সদস্যরা পুজো করে আসছে। এই মন্দিরের সেবায়িত দিলীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় ৫০০ বছর আগে আমাদের পূর্ব পুরুষের জমিদারীর অধীনে এই মন্দিরগুলি আসে। তখন থেকে আমাদের পরিবার এই মন্দিরগুলির পুজো করে এসেছে। কিন্তু তখনকার জমিদারি এখন আর নেই। ফলে এখন এই মন্দিরগুলি সংস্কার করার মতো আর্থিক অবস্থা আমাদের পরিবারের নেই। তাই আবেদন করবো, যদি তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদ এই মন্দিরগুলো সংস্কার করলে আমরা খুবই উপকৃত হবো।”
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য শোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মন্দিরগুলি নির্মাণের দিনক্ষণ আর মনে নেই। তবে আনুমানিক ৪০০ বছরের বেশি হবে এই মন্দিরগুলির বয়স। সংস্কারের অভাবে এখন মন্দিরগুলির অবস্থা জরাজীর্ণ। আমি তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদের কাছে আবেদন করব মন্দিরগুলি সংস্কার করে দেওয়ার জন্য। মন্দিরগুলি সংস্কার করা হলে এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য বেঁচে থাকবে।”
তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “মন্দিরের দায়িত্বে থাকা পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করলে অবশ্যই আমরা মন্দিরগুলির সংস্কারে হাত দেব। আমরা কখনো চাই না, এরকম প্রাচীন মন্দির সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাক। এই জন্যই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পরিষদ তৈরী করেছেন। আমাদের কাছে আবেদন এলেই পরবর্তী মিটিংয়ে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।”