পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ এপ্রিল: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রীতিমতো উত্তেজনা গোটা রাজ্যজুড়ে। প্রায় ২৬ হাজার চাকরি যাওয়াতে রাস্তায় বসেছে শিক্ষকরা। কোথাও কান্নার রোল, তো কোথাও রাজ্য সরকারকে দোষারোপ, আবার কোথাও কোথাও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে আরেকবার ভাবনা চিন্তা করার আর্জি শিক্ষকদের। তবে এবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরে আন্দোলনে নামলো চাকরি হারানো শিক্ষকরা।
মেধার মধ্যে দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ হওয়ার পর চাকরি যাওয়াতে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকেই গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাদের বক্তব্য, এত বছর ধরে চাকরি করে মান সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বেঁচেছিলাম, কিন্তু কাল প্যানেল বাদ হয়ে যাওয়ায় আর স্কুলে থাকতে পারিনি। কিকরে মুখ দেখাবো আমরা এই ক্ষুদে ছাত্রছাত্রীদের কাছে। যেখানে আমাদের চাকরিটাই অবৈধ বলে ঘোষণা হয়েছে। এরই পাশাপাশি দীর্ঘ এত বছরে আমাদের পরিবার বেড়েছে। বাবা- মার পাশাপাশি স্ত্রী- কন্যা- পুত্রদের নিয়ে সংসার করছি। আমরা তাদের মুখে দুমুঠো দুবেলা খাবার কিভাবে তুলে দেব সেই চিন্তায় আতঙ্কিত। এই পরিস্থিতিতে আমাদের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো গতি নেই।
এ বিষয়ে শিক্ষক অভিজি গিরি বলেন, ”আমি অঙ্কে গোল্ড মেডেলিস্ট। এতদি সম্মানের সঙ্গে চক, ডাস্টার নিয়ে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছি। কিন্তু আ দেখলাম পরিকল্পনা মাফিক আমার চাকরি খেয়ে নিল এই সরকার। তাই আমরা সতর্ক করতে চাই, যে হাতে আমি ভালো অঙ্ক করতে পেরেছি সেই হাতে আমি বোমাও বানাতে পারি এবং তার জন্য যা পরিস্থিতি হবে তার দায়িত্ব নেবে এই রাজ্য সরকার।
অন্যদিকে শিক্ষক কৃষ্ণ গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ”আমরা কোনো নেতা মন্ত্রীকে টাকা দিয়ে চাকরি পাইনি।আমরা নিজেদের যোগ্যতা অনুসারে চাকরি পেয়েছি।তারপরও আমাদের চাকরি বাতিল করেছে। এর ফলে আমরা এখন পথে বসে গিয়েছি। আমরা এখন কেবলমাত্র অবরোধ করে গেলাম। এরপর আমরা পরিবার সহ রাস্তায় বসবো।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর ২২ এপ্রিল ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য সরকার। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আমরা কারও চাকরি খেতে দেব না।” কিন্তু ঠিক এক বছর পর সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল। বাতিল হয়ে গেল ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া গোটা প্যানেল। যার ফলে বর্তমান রাজ্য সরকারকে দুষছে চাকরি হারানো শিক্ষকরা।