Taslima, Jamaat, জামাত-শিবিরদের ছড়িয়ে দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দিলেন তসলিমা

আমাদের ভারত, ১৪ অক্টোবর: অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে জামাত-শিবিরদের ছড়িয়ে দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দিলেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এই সঙ্গে লিখেছেন, “কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে পশুবলি না, পশু কুরবানি আজ থেকে বন্ধ হোক।”

তসলিমা সোমবার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “বাংলাদেশের জামাত-শিবির, হেফাজতি-হিযবুতি, আইসিস-আনসারুল্লাহ জিহাদি-জঙ্গি, সন্ত্রাসী-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে এই লেখাটি। ‘এই যে তসলিমা নাসরিন আজ পূজার ‘ভোগ’ খেয়ে ফেসবুকে জানান দিলেন। কই কোনো কুরবানির ঈদে তো তাকে গরুর মাংস খেয়ে জানান দিতে দেখলাম না! অসাম্প্রদায়িকতা মানে কি কেবল একটি বিশেষ ধর্মকে ঘৃণা করতে শেখা? তাদের অসাম্প্রদায়িকতা এমন একপাক্ষিক কেন?’

এর উত্তরে আমি বলছি, হিন্দুরা তাদের কাল্পনিক দেবদেবীকে খিচুড়ি নিরামিষ, মিষ্টি, ফল ইত্যাদি “ভোগ” নিবেদন করে। ভক্তরা বিশ্বাস করে এই ভোগ দেবদেবীর আশীর্বাদপুষ্ট। তারা ভোগ বা প্রসাদ ভক্তিভরে খায়। অন্যকে খেতে দেয়। হিন্দুদের ভোগ আর মুসলমানের কুরবানির গরুর মাংস এক নয়।

জন্ম থেকে গৃহস্থ বাড়িতে আদরে আহলাদে বড় হওয়া পোষা জীবন্ত বলিষ্ঠ ষাঁড়কে কয়েকজন লোক বাঁশ আর দড়িতে বেঁধে, ল্যাং মেরে শুইয়ে দেয়। বাঁচার জন্য চিৎকার করে কাঁদতে থাকে ষাঁড়, চার পা ছুঁড়ে কাঁদতে থাকে অসহায় নিরীহ প্রাণী। কিন্তু কেউ তাকে বাঁচতে দেয় না। তার কণ্ঠদেশ ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে থাকে। ফিনকি দিয়ে ওঠে রক্ত। পাশে দাঁড়িয়ে নৃশংস হত্যা কাণ্ড দেখতে থাকা লোকেরা আনন্দে হাততালি দিতে থাকে। আল্লাহ আকবর বা আল্লাহ শ্রেষ্ঠ বলে কাল্পনিক আল্লাহর উদ্দেশে পোষা ষাঁড়ের কণ্ঠদেশ কাটতে থাকে, রক্তের বন্যা বইতে থাকে।

কুরবানির গল্পটাও কাল্পনিক। আল্লাহ নাকি ইব্রাহিম নামের এক লোককে বলেছিলেন আল্লাহকে সে কতটা ভালবাসে তার প্রমাণ দিতে হবে নিজের পুত্রকে কুরবানি দিয়ে। কোনও মহান কেউ কি এমন আবদার করতে পারে? কোনও পিতা কি কোনও কিছু প্রমাণ দিতে নিজের পুত্র’কে হত্যা করার জন্য তৈরী হয়? হয় না।

হিন্দুরাও তাদের কাল্পনিক ভগবানকে খুশি করতে এক সময় পশু বলি দিত। শুধু হিন্দুরাই নয়, পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা নানা গোষ্ঠী পশু বলি তো দিতই, নরবলিও দিত। কিন্তু মানুষ যত সভ্য হয়েছে, তত বিলুপ্ত হয়েছে অমানবিক বর্বর প্রথা। হিন্দুরা এখন আর পশু বলি দেয় না। পশু বলি দেওয়া নিষিদ্ধ।

শুধু মুসলমানরাই টিকিয়ে রেখেছে পশুবলি বা কুরবানি। মুসলমানরা সভ্যতার পথে হাঁটতে শুরু করলে, আমি বিশ্বাস করি, এই নৃশংস কুরবানি প্রথা তারা নিষিদ্ধ করবে।

ভারতে গরু কুরবানি নিষিদ্ধ, এদেশে মুসলমানেরা ঈদের দিন ছাগল বা “বকরি” কুরবানি দেয়। যে দেশে আমি বাস করছে, সেখানে মুসলমানেরা আমাকে কেউ ঈদের “দাওয়াত” খেতে ডাকেনি। আমি যে গরুর মাংস খাই না, তা তো নয়। ভারতের বাইরে গেলে খাই। তবে সেসব মাংস কুরবানি ঈদের নয়, ফার্মের গরুর মাংস,যে গরুকে খাদ্য হিসেবে জন্ম দেওয়া এবং বড় করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *