সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: শাসন করতে গিয়ে উলটে কিশোর সাতারুরই ক্ষতি করে বসলেন প্রশিক্ষক। শনিবার হেদুয়ার ন্যাশনাল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের মাথার ডানদিকে ট্রেনারের চড় খেয়ে মারাত্মক জখম হলেন প্রশিক্ষণরত সাঁতারু তথা নবম শ্রেণির পড়ুয়া ১৪ বছরের অপরাজেয় বোস। কানে-চোখে তীব্র আঘাতে ক্ষতি হয়েছে দৃষ্টিশক্তিরও। এই ঘটনায় বটতলা থানায় ট্রেনারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে কিশোরের পরিবার। ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা ট্রেনার প্রবীর বসাক।
জানা গিয়েছে, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের নবম শ্রেণির এই ছাত্র দশ বছর ধরে হেদুয়ার ক্লাবে সাঁতার শিখছে। একাধিকবার বিভিন্ন ইন্টারস্কুল মিটে জাতীয় স্তর থেকে পুরস্কারও নিয়ে এসেছে। অভিযোগ, শনিবার সন্ধ্যায় ট্রেনার প্রবীর বসাকের কাছে মার খেয়ে সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়ে অপরাজয়। বমি করতে শুরু করে, তার কানে এবং মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। কান থেকে তরল পদার্থও বেরিয়ে আসছিল। তার উপর বমি বন্ধ না হওয়ায় ছেলেকে নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছোটেন হাতিবাগানের বাসিন্দা কিশোরের মা বাবা সন্দীপ বসু এবং মিতা বসু।
সন্দীপবাবু জানিয়েছেন, মেডিক্যালের এমার্জেন্সিতে দেখার পর ইএনটি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর জানানো হয়, কানে আঘাত থেকে রস বেরোলেও পর্দায় কিন্তু বড় কোনও ক্ষতি নেই। বমি কেন বন্ধ হচ্ছে না, তা জানার জন্য সিটি স্ক্যান ও এক্সরে করেন চিকিৎসকরা। কোনও ইন্টারন্যাল হেমারেজও মেলেনি। তবে অনুমান, আচমকা জোর আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ভারসাম্যের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
এর পরে সেখান থেকে রেফার করা হয় রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজি বা চোখের বিভাগে। সেখানেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে, আঘাতের ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হয়েছে। ‘ডাবল ভিশন’ এবং ‘ব্লারড ভিশন হচ্ছে। সোমবার ওষুধ ও ড্রপ দিয়ে ছাড়ার পর বৃহস্পতিবার ফের আসতে বলা হয়েছে।
ঘটনার দু’দিন সোমবার রাত সাড়ে এগারোটায় সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন থেকে অপরাজেয়র পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সন্দীপবাবু জানিয়েছেন, ক্লাবের কর্তারা বাড়িতে এসে তাঁকে বলেছেন যে তাঁরা এই অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য দুঃখিত এবং লজ্জিত। প্রবীরবাবু এবারে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। অপরাজেয়র চিকিৎসার খরচ বহন করারও প্রস্তাব দিয়েছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে দাবি নাকচ করে সন্দীপবাবু জানিয়েছেন, ”আমার ছেলে চিকিৎসা খরচ আমি চালাতে পারব। আপনাকে ওই ট্রেনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।” ক্লাব আশ্বাস দিলেও আদৌ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সন্দিহান কিশোরের পরিবার। এদিকে পুলিশও ওই সুইমিং ক্লাবে গিয়ে কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসেছে। পলাতক ট্রেনার প্রবীর বসাকের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়েছে।