পুঞ্জীভূত মনের ধার মিটিয়ে স্বদেশী জাগরণ করতে হবে

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী

আমাদের ভারত, ২৫ জানুয়ারি: স্বদেশ কাকে বলে, রাষ্ট্রের ধারণা কি, শিকড়-সংস্কৃতি কি — সেটাকে ভুলিয়ে দেবার এক বহুমুখী প্রচেষ্টার বহু ব্যাপকতার নামও গ্লোবালাইজেশন। বিশ্বায়নের মধ্যে যদি কেবল সামগ্রীর ব্যবহারখানি থাকতো, বিজ্ঞানের তত্ত্বের ও প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবহারটুকু গৃহীত হতো, প্রয়োজনীয় জিনিসটির আমদানিটুকু থাকতো তবে স্বাদেশিকতার সমস্যা, স্বাবলম্বনে পুনর্ব্যবস্থা ও পুনর্বাসন সমস্যাটি এতটা গভীর ও জটিল হত না, কিন্তু ইদানীং কালে তাই অনুভূত হচ্ছে। সমস্যার মূল কারণ হল বিদেশি তাত্ত্বিকতা। বিদেশি তত্ত্ব, বিলাতের শিক্ষা উত্তম; পশ্চিমের তাত্ত্বিকতা, দর্শন-রাজনীতি-সমাজনীতি-অর্থনীতি ভারতে প্রয়োগে সামূহিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে, ‘ইজম’-কে প্রতিষ্ঠা দিতে হবে; ভারতের ধর্ম-দর্শন-সংস্কৃতির যাবতীয় মাটি চেঁছে তাতে বিদেশি তাত্ত্বিকতার পিলার বসিয়ে তবে অট্টালিকা নির্মাণ করতে হবে; রাষ্ট্রকে ছাপিয়ে আন্তর্জাতিকতার এলাহি আয়োজন করতে হবে — তা থেকেই তৈরি হয়েছে পরনির্ভরতার যাবতীয় সমস্যা।

বিদেশি বিচারধারার প্রচার ও প্রসারে রাজনৈতিক সংকল্প ও ব্যাপকতা বিষয়টিকে বহুজটিল করে তুলেছে। দেশে অনেক মানুষের মধ্যে স্বদেশী ভাবনা নেই, সংস্কৃতির সংরক্ষণ নেই, অথচ আন্তর্জাতিকতার মানস-সিংহাসন মজবুত। কোথায় স্বাবলম্বনের বেড়া দিতে হয়, কোথায় দেশরক্ষার জন্য আত্মবলিদান করতে হয়, তার নির্দেশ নেই যে মতাদর্শে, যে মস্তিষ্কে, যে চেতনা-প্রবাহে — তার ভরকেন্দ্র ভারতবর্ষ নয়, হতে পারে ভারতবর্ষের বাইরের কোনও গুপ্তদেশে, বিদেশি শক্তির মন্ত্রগুপ্তির শপথে। তাদের সঙ্গে দেশব্রতী মানুষের বিচার ধারার মূল পার্থক্য হল এইরকম —

রাষ্ট্রবাদী মানুষ মনে করেন, “আগে দিয়ে বেড়া/তবে ধরো গাছের গোড়া।” দেশকে আত্মনির্ভরতা দিয়ে, অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিয়ে প্রতিটি জীবনবৃক্ষকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তাই রাষ্ট্রীয় বেড়া দিতে হবে। বিদেশী নির্ভরতা কমিয়ে ভারতীয় সামগ্রীর উৎপাদন ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধির নতুন নামকরণ হোক স্বদেশী জাগরণ। আজকের পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশী জাগরণের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে।

প্রথম আয়োজনটি হওয়া উচিত পুঞ্জীভূত মানসিক ধার মেটানোর কার্যক্রম; এতদিনের মানসিক ঋণের বোঝা দূর হোক। স্বদেশী ঘরানার মানসচর্চা কোথা থেকে কোথা পর্যন্ত বিস্তৃত, কোথায় তার নানান সমৃদ্ধি, কোথায় তার বিকাশ ও সম্ভাবনা — তার সুলুকসন্ধান করার নিত্যকর্ম হবে জাগরণের-পূজারী ও প্রচারকবৃন্দের আশু কর্তব্য।

কিন্তু তাই বলে কী পাশ্চাত্যের প্রভাব খারাপ? কোথায় প্রাচ্য আর কোথায় পাশ্চাত্য খাপ খাবে, সে সম্পর্কে আধুনিক ভরতবর্ষের রাষ্ট্রবাদী মানুষের বাইরে সেই জ্ঞানের দীনতা বরাবরই ছিল। কোথায় ভারতবর্ষ চিন্তায়-চেতনায়, সম্পদে-আয়োজনে ধনী, কোথায় আমাদের দারিদ্র্য, কোথায় আমাদের বিদেশী দই-এর দম্বলটুকু নিয়ে ভারতে দই পাততে হবে, সে ধারণার যারপরনাই খামতি ছিল। আজ করোনা পরিস্থিতিতে সুযোগ এসেছে বিদেশি বিদায় করে স্বদেশী আহ্বানের কাজকে বাস্তবায়ন করা। এটাকে বলা যেতে পারে অকাল দীপান্বিতা লক্ষ্মী-পূজার আয়োজন।
অলক্ষ্মীকে দূর করে লক্ষ্মীকে গৃহে প্রতিষ্ঠা। দেশীয় বিচারধারার ভিত্তিপ্রস্তর পাকা করার নামই হল নবতর-স্বদেশী-জাগরণ।

আমরা অন্য দেশ, অপর জাতি থেকে সামগ্রী, সম্পদ ও জ্ঞানান্বেষণে আগ্রহী, উৎসাহী; কিন্তু তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চিনে নিতে হবে আমাদের পুরাতনী ঐতিহ্যের আলোয়, বুঝতে হবে বর্তমানের প্রয়োজনানুসারে, ধরতে হবে তার সাযুজ্য; কারণ একটি প্রবাদ বাক্য হল, “এক গাছের ছাল আর এক গাছে জোড়ে না”। সিদ্ধান্ত নিতে হবে কতটুকু গ্রহণ করবো, আর কতটুকু বর্জন করবো। বিদেশের মোহ আর অন্ধ অনুকরণ বন্ধ করার নাম স্বাদেশিকতা। আপন সামর্থে, দেশীয় সৌকর্যে আপনার বাগানে ফুল ফোটান যিনি, তিনিই স্বদেশী। আপনার চিন্তা-চেতনায় আপন দেশের মাটি যার কাছে বহুগুণ পবিত্র তিনিই স্বদেশী। বিদেশে বসবাস করেও ভারতের মানুষের মঙ্গলের জন্য সতত পরিকল্পনা করতে পারেন যিনি, সেই ত্যাগী মানুষকে স্বদেশীয় বলা চলে। যার মস্তিষ্কে, মননে, করসেবায় ভারতের তপস্যা তিনি ভারতীয়।

ভারতে বসে ভারতরাষ্ট্রের ভিত যিনি প্রতিনিয়ত দুর্বল করার সিঁদ কাটেন তিনি বিদেশি। ভারতে বসবাস করে যার হেড কোয়ার্টার বিদেশের সিগনাল ক্যাচ করে তিনি অবশ্যই বিদেশি। দেশী-বিদেশীকে চিনতে পারার অন্য নাম স্বাদেশিকতা।

টুথপেষ্ট, ব্রাশ, সাবান, নানান প্লাস্টিক সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস জিনিসপত্র ইত্যাদি দিয়ে দেশের বহু মানুষের সকাল থেকে সন্ধ্যা কাটে। হয়তো ব্যবহারকারীরা জানেনই না যে জিনিসগুলি বিদেশি কোম্পানির তৈরি। হয়তো জিনিসগুলি যারা বিপণন করেন — দোকানদার, মুদি, ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসেছেন যিনি তারাও জানেন না, জিনিসগুলি ভারতীয় প্রোডাক্ট নয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বহু জিনিস বিদেশি, অথচ যে জিনিস উৎপাদনের সক্ষমতা, বিপণনের সুযোগ ও সম্ভাবনা ভারতেই আছে, তবুও তা অঢেল বিকিকিনি হচ্ছে।

ডাক দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর ভারত গড়ার, প্রচেষ্টা হচ্ছে স্বদেশী জাগরণের, তবে যে জিনিসটি দিয়ে শুরু করতে হবে তা হল, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ব্যবহার-জনিত ধার মেটানোর মানসিকতা। দেশের সব মানুষকে জানতে হবে কোন প্রোডাক্ট, কোন কোম্পানির মালিকানা ভারতীয় নয়, কোন কোন বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান তাদের নানাবিধ পণ্য সমগ্র ভারত জুড়ে ছড়িয়ে বসে আছে। জানতে হবে এই সামূহিক বেচাকেনায় কত লক্ষ কোটি ভারতীয় মুদ্রা সেই বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতবর্ষের মতো দেশে যদি ভারতীয় কোম্পানিগুলি সেই সব পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়, তবে এই দীর্ঘকালের বিদেশী নির্ভরতা কতটা কমবে, তারও একটি অর্থনৈতিক সমীক্ষা পাশাপাশি করা জরুরী।

আত্মনির্ভর-ভারত আন্দোলনের দু’টি দিক — প্রথম বিদেশী বয়কট, পিকেটিং, প্রতীকী প্রতিবাদ-স্বরূপ এক দু’টি সামগ্রী পোড়ানো যা বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে দেখা গিয়েছিল, দ্বিতীয় দিকটি হল দেশীয় উৎপাদনের তোড়জোড় ও গবেষণা। দু’টি আন্দোলনকেই যুগপৎ চালাতে হয়েছে ভারতবর্ষ সহ নানান দেশে। বিদেশী জিনিস বয়কটের মূল প্রতিবন্ধকতা হল, সাধারণ মানুষ জানেন না, কী কী অতি সহজেই বয়কট করা সম্ভব, কী কী সামগ্রী দেশীয়ভাবে নির্মাণ করা যায়। আরও মনে রাখতে হবে, কোন পণ্য কোন কোন উৎস সামগ্রী বা র-মেটেরিয়ালের উপর নির্ভরশীল যা বিদেশ থেকে আমদানি না করলে চলে না; খেয়াল রাখতে হবে আপাতত বিদেশ থেকে যা আমদানি না করেও চালিয়ে নেওয়া যায় সেই সমস্ত জিনিসগুলি কী কী। আর একটি বিষয় হল কোনো কোনো দেশীয় কোম্পানির বিদেশী স্লিপিং পার্টনার থাকে, যারা প্রযুক্তিগত ও পরিকাঠামোগত সহায়তা দেয়, তাদের কতটা বিদেশী কোম্পানি বলে ধরা হবে; তাদের সেই বিদেশী কারিগরি সম্পর্কটি কতটা বলবৎ রাখা সম্ভব, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এ সবই বিশ্লেষণ করা দরকার। এজন্য প্রয়োজন হচ্ছে ভারত-মনস্ক দেশীয় উদ্যোগপতিদের উদ্যম, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সততা। নানাবিধ উৎপাদনের জন্য দেশীয় উদ্যোগপতিদের এগিয়ে আসতে হবে। যে জিনিস খুব সহজে, সুলভ প্রযুক্তিতে কম পুঁজি ব্যবহারে ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিরা গ্রামে, শহরের উপান্তে তৈরি করতে সক্ষম হবেন, তা দেশজুড়ে তৈরি হোক। সাবলম্বী ভারতের একটা বৃহৎ মানে হল, ভারতের গ্রামগুলিকে যথাসম্ভব উৎপাদনে ও আয়োজনে, জীবনচর্যায় আগের মতোই সাবলম্বী করে তোলা, যেটা নেহেরু জামানায় রুশ মডেলে আইটিআই-ধাঁচের কিছু কারিগর বানিয়ে তাদের শিল্প কারখানায় পাঠিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। গ্রামের মানুষ আর কামারের বানানো জিনিস কিনলো না, কুমোরের তৈরি পাত্র দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগালো না, গ্রামের স্যাঁকরার ব্যবসা উঠে গেলো, মুচি তার জুতো বানানো বন্ধ করে দিল। সবাই ছুটলো কলের জিনিস কিনতে, শহরের দোকানে বহুজাতিক কোম্পানির জুতোয় ছেয়ে গেলো।

কৃষি পণ্য তো বটেই, গ্রামীণ জীবনচর্যায় ও মানসচর্চার পরতে পরতে স্বাবলম্বন আনতে হবে। ব্যবহৃত নানান সামগ্রীতে স্বাবলম্বন আনতে হবে। কৃষির ক্ষেত্রে স্বাবলম্বিতা মানে হল বীজ, সার, কীটঘ্ন ও কৃষি যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে স্বাবলম্বন। বীজ নীতি এমন হওয়া উচিত, যাতে কৃষক চাষের কাজে নিজের বীজ নিজেই তৈরি করে নিতে পারে, কোনো বহুজাতিক বীজ কোম্পানিগুলোর উপর অন্যায়ভাবে নির্ভর করতে না হয়। এতে বীজের খরচ যেমন কমে, তেমনই নির্দিষ্ট ফসল চাষ করিয়ে বা বীজ ব্যবহার করিয়ে কৃষককে পরিচালিত করার বহুজাতিক স্বার্থ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, কৃষক চাষ থেকে লাভবান হন। যে কৃষকের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব নয়, সরকারী খামারগুলি স্থানীয়ভাবে তাদের জন্য বীজ উৎপাদনের ব্যবস্থা করবে। কোনো বীজ খামারকেই ফসল বিহীন পতিত করে রাখা চলবে না। প্রয়োজনে কৃষকের জমিতে পার্টিসিপেটরি সিড প্রোডাকশনের জন্য কৃষক, প্রজননবিদ ও সিড সার্টিফিকেশন আধিকারিকদের জুড়ে দিতে হবে।

রাসায়নিক সারের জন্য প্রচুর বিদেশি নির্ভরতা আছে। জৈবিক চাষাবাদের মাধ্যমে রাসায়নিক সারের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে শূণ্যে আনাটাই সবচাইতে বড় স্বাবলম্বন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জৈবসারের গুণগত মানের ক্ষেত্রে কৃষিজীবী মানুষ কোনো দুর্নীতি সহ্য করবেন না। সমন্বিত কীটশত্রু ব্যবস্থাপনা বা ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট করার মধ্যে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক ব্যবহার বিধির আয়োজন রাখা যায়, তারই নাম স্বাবলম্বন। দেশীয় গরু, বলদকে কৃষিকাজে সংযুক্ত করে তাদের গোবর-গোমূত্র ব্যবহার করার মধ্যে যে কৃষি-আধার তার সামগ্রিকতা, তার নাম হচ্ছে স্বাবলম্বন। দেশীয় ধারায় জমির মাপ ও ফসল বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে দেশীয় কারিগরি দিয়ে সহজ-সরল-সুলভ যন্ত্রপাতি নির্মাণের নাম স্বাবলম্বন। আশাকরি আগামী দিনে কৃষি গবেষক, প্রশাসক, আধিকারিকেরা এই স্বনির্ভর কৃষির দিকে ধাবিত হবেন।

কৃষিজীবী মানুষের সন্তান যতক্ষণ না পর্যন্ত জমি, ফসল, প্রকৃতি ভালোবাসতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই স্বাবলম্বী ভাব আসবে না। আর এই ভাব আনতে হলে কৃষি ও কৃষককে শহরবাসী প্রবুদ্ধ মানুষের দ্বারা মান্যতা দিতে হবে।
জীবনের সবচাইতে বড় শিল্প হল প্রাকৃতিক পরিবেশে দেশীয় উপায়ে কৃষিকাজে সবচেয়ে বেশি ও উৎকর্ষ মানের ফসল পাওয়া। গ্রামীণ যাবতীয় উৎপাদনের মার্কেটিং এর ব্যবস্থা করে দেওয়াটা সবচাইতে বড় কাজ, এটা যেকোনো মূল্যে করতে হবে।

বহু সামগ্রী তৈরি হয় উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকে, যেমন রিঠা, শিকাকাই থেকে ভেষজ স্যাম্পু ; নানান গাছগাছালি থেকে মশা নিরোধক ধূপ; চিরাচরিত ও অচিরাচরিত জৈব তন্তু দিয়ে নির্মিত বস্ত্র ও থলে। আগে কর্মশিক্ষার অঙ্গ হিসাবে সাবান, ফিনাইল, কালি, কাঠের হ্যাঙ্গার, ইত্যাদি তৈরি স্কুল স্তরেই শেখানো হত; বানানো খুব কঠিন নয় সেগুলি। প্রয়োজনে তুলনামূলকভাবে বড় উদ্যোগে, যৌথভাবে, স্বসহায়ক গোষ্ঠীর দ্বারা গ্রামে বা শহরে তার উৎপাদন সম্ভব, তাতে উদ্ভিজ্জ উপকরণ যথাসম্ভব ব্যবহার করা যায়। প্রসাধনী সামগ্রী বিদেশি কোম্পানির কেন কিনবো? নিজেরাই আগে তো বানাতাম আমরা, অনেক দেশীয় কোম্পানিও বানায়।

ভেষজের ব্যবহার কেন বন্ধ হল? কেন তা ব্যবহারে উদাসীনতা? বিদেশী ওষুধ কোম্পানিগুলোকে সুবিধা করে দিতে অনেক অসাধু মানুষ দেশীয় গাছগাছড়াকে ব্রাত্য করে রেখেছে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সম্পদের পুনর্ব্যবহার করার মধ্যেই সমৃদ্ধশালী ভারতবর্ষ নির্মাণ করা সম্ভব। বৃষ্টির জল, সূর্যালোক, ফসলের খড়নাড়া-কুটিপাতি কোনো কিছুই ফেলনা নয়। প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ ও বর্জ্য পদার্থকে সম্পদ করে তোলার মধ্যে আত্মনির্ভরতা কাজ করে। দেশীয় জিনিস দিয়েই আমাদের রোজকার জীবন চালানোর অভ্যাস করতে হবে।

দেশীয় জিনিস হল মায়ের দান, ভারত মায়ের অমূল্য রতন, মাতৃদুগ্ধ। অপচয় নয়, এই সম্পদকে বিচার বিশ্লেষণ করে দোহন করার নামই হল স্বাদেশিকতা। বাংলার ‘কান্তকবি’ রজনীকান্ত সেনের দেশাত্মবোধক গানের কলিতে কলিতে স্বদেশী জাগরণের চৈতন্য হোক।

“মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই ; দীন-দুঃখিনী মা যে তোদের তার বেশী আর সাধ্য নাই। ঐ মোটা সূতোর সঙ্গে, মায়ের অপার স্নেহ দেখতে পাই ; আমরা, এমনি পাষাণ, তাই ফেলে ঐ পরের দোরে ভিক্ষা চাই। ঐ দুঃখী মায়ের ঘরে, তোদের সবার প্রচুর অন্ন নাই ; তবু, তাই বেচে কাচ, সাবান মোজা, কিনে কল্লি ঘর বোঝাই। আয়রে আমরা মায়ের নামে এই প্রতিজ্ঞা ক’রব ভাই ; পরের জিনিষ কিনবো না, যদি মায়ের ঘরের জিনিষ পাই।” (লেখক একজন কৃষি বিজ্ঞানী।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *