তারক ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ১৯ জানুয়ারি: কলকাতা পৌরনিগম সহ ৯৩টি পৌরসভার খসড়া সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। কিন্তু, বাকি থাকল সিউড়ি আর বোলপুর। সেখানেও এখনও আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হয়নি। সংরক্ষণের খসড়া প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। তার জেরে এপ্রিলে ওই দুই পৌরসভার ভোট নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, যে কোনও পৌরসভা ও পৌরনিগমের বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় তৎপরতা। নিয়মমতো নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কিংবা পৌরনিগমের আসন কিংবা ওয়ার্ডের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হবে কি না। রাজ্য প্রশাসন সেই বিষয়ে সবুজ সংকেত দিলেই সংশ্লিষ্ট জেলার রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ জেলাশাসককে সেই কাজ করার নির্দেশ দেয় কমিশন।
অক্টোবরের মধ্যে রাজ্যের ১১১টি পৌরনিগম এবং পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়েছে। আবার দার্জিলিঙে পৌরবোর্ডই ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সেই সূত্রে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ১১২। রাজ্যের যেক’টি পৌরসভা এবং পৌরনিগমের আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছিল প্রশাসন, তার প্রায় সবক’টিতে পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে যথাসময়ে। শুধুমাত্র বাকি রয়ে গিয়েছে সিউড়ি এবং বোলপুর পৌরসভার আসন পুনর্বিন্যাসের কাজ। যদিও বীরভূম প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে সিউড়িতে আসন পুনর্বিন্যাসের খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে। কিন্তু, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে এখনও পর্যন্ত জেলা প্রশাসনকে আসন পুনর্বিন্যাসের চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারির কথা বলেনি। অর্থাৎ সিউড়ির জটিলতা প্রায় কেটে গিয়েছে। কিন্তু, বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, বোলপুর নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বিস্তর।
সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে যে আসন পুনর্বিন্যাসের কথা হয়েছিল বোলপুরের ক্ষেত্রে, তাতে বিশ্বভারতী দু’টি ওয়ার্ডে ভাগ হয়ে যায় । বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অবশ্য এই বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। কারণ, তাতে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে এই বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বোলপুর পৌরসভার সীমানা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন। সেটি আপাতত নবান্নের বিবেচনাধীন। নবান্ন সূত্রের খবর, বর্তমানে বোলপুর লাগোয়া একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের থেকে বড় অংশ বোলপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
এই বিষয়ে নবান্নের সবুজ সংকেত পেলে, তার পর নতুন করে সীমানা নির্ধারণ হবে ওই পৌরসভার। সূত্র জানাচ্ছে, সেই কাজ করতে আরও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের আগে এই সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। এর পর করতে হবে সংরক্ষণের তালিকা প্রস্তুতের জটিল অঙ্ক। এই কাজ সিউড়ি এবং বোলপুরে একসঙ্গেই শুরু হতে পারে। সেই কাজ শেষ হতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি গড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। জেলা প্রশাসনের তরফে খবর, এই সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ হওয়ার পর তা পাঠানো হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে। তারপর প্রকাশ করা হবে সংরক্ষণের খসড়া। এই পুরো প্রক্রিয়া ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হওয়া খুবই কঠিন বলেই মেনে নিচ্ছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
রাজ্যের পৌর আইন বলছে, সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশের ন্যূনতম ৭০ দিন পরে ভোট করতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি ফেব্রুয়ারির শেষেও সংরক্ষণের খসড়া প্রকাশ করা হয়, তবে এপ্রিলের মধ্যে ভোট হওয়া সম্ভব নয়। আবার এপ্রিলের ২৪ কিংবা ২৫ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস। ওই সময় ভোট করার পক্ষপাতী নন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগেও তিনি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে রমজানের পরে ওই দুই পৌরসভার ভোট হতে পারে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।