অবাক ঘটনা! নির্মল জেলাতেই শৌচালয় বিহীন আস্ত আদিবাসী গ্রাম, তপনের শিকারপুর গ্রামের অনুন্নয়নের ছবি, লজ্জায় প্রশাসন

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ২৮ মার্চ: অবাক ঘটনা! নির্মল জেলাতেই শৌচালয় বিহীন আস্ত আদিবাসী গ্রাম। লজ্জা নিবারণ করে ঝোপঝাড়েই বছরের পর বছর শৌচকর্ম সারছেন ওই গ্রামের আদিবাসী মহিলারা। যা দেখে ফিরেও তাকায়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত। গ্রামে ঢোকার রাস্তা দেখলে চোখ কপালে উঠবে আপনারও। ঘটনার কথা শুনে অবাক হয়েছেন খোদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। যদিও এই ঘটনা নিয়ে সরাসরি পঞ্চায়েতের দিকে আঙুল তুলেছেন এলাকার বিধায়ক। তার দাবি, আদিবাসী গ্রামের পায়খানা খেয়ে নিয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকারপুর আদিবাসী গ্রামের।

বছর কয়েক আগে নির্মল জেলা ঘোষণা করতে কোমর বেঁধে নেমেছিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। ভোররাত থেকে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশকে নিয়ে কখনও বিডিও, কখনও জেলাশাসক আবার কখনও পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদের নিয়ে
দৌড়ঝাঁপ করে মানুষকে সচেতন করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও আবার মাঠেঘাটে শৌচকর্ম করার জন্য জরিমানাও করতে দেখা গেছে প্রশাসনকে। তারপরেই রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলাকে ঘোষণা করা হয়েছিল নির্মল জেলা। প্রতিটি পঞ্চায়েত নির্মল ঘোষণার পরেই জেলাকে নির্মল ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। যেসবের প্রচার ফ্লেক্সও আজ ফিকে হয়ে ছিঁড়ে গিয়েছে। কিন্তু সেসব যে শুধুমাত্র লোকদেখানো এবং সরকারি টাকা অপচয়ের কাহিনী, তা যেন তপন ব্লকের রামচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শিকারপুর আদিবাসী গ্রামে গেলেই স্পষ্ট হবে।

একশো শতাংশ আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে প্রায় দেড়শোরও বেশি পরিবারের বসবাস। যাদের কারো বাড়িতেই নেই শৌচালয়। হতদরিদ্র ওই আদিবাসী পরিবারগুলিতে যেখানে দুবেলা খাওয়াই জোটে না সেখানে বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করা যেন নিতান্তই বিলাসিতা ছাড়া অন্যকিছু নয়। আর তাই গ্রামের পুরুষ থেকে মহিলা, শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই পায়খানার জন্য ছুটতে হয় নিকটবর্তী ঝোপঝাড় বা ধানের জমিতে। রাতবিরেত বা বর্ষাকালে কার্যত জীবন হাতে নিয়েই পায়খানা করতে হয় আদিবাসী পরিবারগুলিকে। যে দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে চোখে দিয়ে জল বেরিয়ে আসে কিছু আদিবাসী মহিলাদের। বছরের পর বছর, মাসের পর মাস গ্রামজুড়ে পায়খানা নিয়ে একই দুরবস্থা চললেও ফিরেও তাকায়না কেউ। আর তাই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নেতাদের ঝেঁটিয়ে গ্রাম ছাড়া করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদিবাসী মহিলারা।

এখানেই শেষ নয়, গ্রামে ঢোকার মুখে বেহাল রাস্তা দেখলে চোখ কপালে উঠবে সকলেরই। বেহাল সেই রাস্তার কারণে আজো বাড়িতেই সন্তান প্রসব করবার রেওয়াজ কার্যত চালু রয়েছে আদিবাসী ওই গ্রামে। শুধু তাই নয়, গ্রামে কারো বাড়িতে আজো ঢোকেনি বিপিএলের বিদ্যুৎ সংযোগ। আর যে কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছেঁড়া তার দিয়ে হুকিং করেই বাড়িতে আলো জ্বালান আদিবাসী পরিবারগুলি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কখনও পিপড়ের ডিম খেয়ে আদিবাসীদের জীবনযাপন, আবার কখনও অনাহারের কাহিনীও সামনে এসেছে, যা দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন। কিন্তু তার থেকেও যেন ভয়ঙ্কর জীবনযাপন তপনের শিকারপুর গ্রামের আদিবাসী মহিলাদের। যা নিয়েই উঠেছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। আস্ত গ্রাম শৌচালয়বিহীন হয়ে থাকবার পরেও কিভাবে সেই পঞ্চায়েত বা জেলা নির্মল ঘোষণা হল? কাদের গাফিলতির জেরে সরকারি সমস্ত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হল আদিবাসীরা? ঘটনা শুনে অবাক তপন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজু দাস।

তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে প্রথম এই খবর পেয়ে খুবই অবাক হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এত উন্নয়নের পরেও কিভাবে একটা আদিবাসী গ্রাম ছাড়া পড়লো তা ভেবে তার নিজেরও খারাপ লাগছে। অতিদ্রুত যেন তাদের পায়খানার ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।

গ্রামের আদিবাসী মহিলা পানসারি বেসরা, কলিতা সরেন, হীরামণি মার্ডি ও লক্ষ্মী মার্ডিরা বলেন, গ্রামে কারো বাড়িতেই পায়খানা নেই। মাঠ ঘাটই তাদের ভরসা। এরজন্য লোকের গালমন্দও তাদের খেতে হয়। ছয়বছর আগে নয়শো টাকা নিয়ে গেলেও পায়খানা দেয়নি। রাস্তা, পায়খানা, কিছুই পাননি তারা। কুড়ি বছর ধরে নেতারা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে এসেছে। তাই এবারে এলে তাদের ঝাঁটাপেটা করবেন।

গঙ্গারামপুরের বিজেপি বিধায়ক সত্যেন রায় জানিয়েছেন, খুবই লজ্জার বিষয়। আদিবাসী মা বোনেরা আজও লজ্জা ত্যাগ করে মাঠেঘাটে পায়খানা করছে। এমন ঘটনা মানা যায় না। পঞ্চায়েত সমস্ত পায়খানা খেয়ে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে আজই কথা বলবেন বিডিওর সাথে, এর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *