আমাদের ভারত, ৬ ফেব্রুয়ারি: বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটকে রাজ্যের জণগণের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতারণা, প্রহসন ও প্রদর্শনী মেলা বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায় রাজ্যের অবনতিশীল, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশকে ঢেকে রাখতেই উদ্যোগ নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এক্স হ্যান্ডেলে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণকে প্রতারণার পুরনো কৌশল এবং ঐতিহ্য বজায় রেখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুনরায় একটি প্রহসনের আয়োজন করেছেন—’বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’—যার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র বাংলার জনগণকে বিভ্রান্ত করা। ২০১৫ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে তথাকথিত এই সম্মেলন শুধুমাত্র একটি জাঁকজমকপূর্ণ প্রদর্শনী মেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার মাধ্যমে তৃণমূলের রাজত্বে বাংলার ক্রমশ অবনতিশীল, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশকে ঢেকে রাখার পূর্ণ অপচেষ্টা চরিতার্থ করা হয়েছে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি একটি বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন তার পোস্টে। তাঁর দাবি, ২০১৫ সালে প্রথম বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে রাজ্যে শিল্প ধ্বংসের পথে এগিয়েছে। লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে। পরিসংখ্যানে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২১,৫২১টি শিল্প ইউনিট বন্ধ হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গ পরিবেশ দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী স্পষ্ট। এই বিশাল সংখ্যক কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়েছে।
সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, একাধিক নামজাদা কোম্পানি বাংলা থেকে শিল্প গুটিয়ে নিয়ে চলে গেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটানিয়ার মতো বড় প্রতিষ্ঠান-সহ ২,২২৭টি নিবন্ধিত সংস্থা, যা উৎপাদন, অর্থনীতি, কমিশন এজেন্সি ও বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তারা বাংলা ছেড়ে চলে গেছে।
অর্থনৈতিক অবদান হ্রাস পেয়েছে স্ট্যাটিস্টিক এবং প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০-৬১ অর্থবছরে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের জিডিপিতে ১০.৫% অবদান রেখেছিল এবং তৃতীয় স্থানে ছিল। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই হার নেমে এসেছে মাত্র ৫.৬%-এ।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দাবি, বিনিয়োগকারীদের নজরে পশ্চিমবঙ্গের ক্রমাগত পতন হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৭০-এর দশকে মুম্বাইয়ের পরেই পশ্চিমবঙ্গ কোম্পানির সদর দফতরের জন্য, কোম্পানীগুলির জন্য দ্বিতীয় পছন্দের স্থান ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের মধ্যে বাংলার অবস্থান নেমে এসে ৮ম স্থানে, যেখানে মুম্বাই তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
বিনিয়োগকারীদের নজরে পশ্চিমবঙ্গের ক্রমাগত পতনের কারণ হিসেবে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, বিনিয়োগকারীদের উপর অত্যাচার হয়েছে রাজ্যে। কারণ হলো শাসক দলের দুষ্কৃতীদের দ্বারা লাগাতার জুলুমবাজি ও হেনস্থার মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো, IFB Agro-এর নূরপুর কারখানায় সশস্ত্র হামলা এবং তারপর কোম্পানিকে জোর করে ৪০ কোটি নির্বাচনী বন্ড প্রদানের জন্য বাধ্য করা—যা স্পষ্টভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে দুষ্কৃতি রাজের সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
আর সমস্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিজেপি নেতার দাবি, “এই তথ্যগুলিই প্রমাণ করে যে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট আসলে জনগণের করের টাকায় পরিচালিত একটি প্রতারণার উৎসব মাত্র। এটি মূলত একটি ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার কৌশল, যার মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিথ্যাচারের সরকার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের আড়ালে বাংলার মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করে চলেছে।”