আমাদের ভারত, ১৫ এপ্রিল: ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা। হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হন। সরকারি সম্পত্তি ভাঙ্গচুর করা হয় ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছে পুলিশ, কিন্তু এখনো অনেক হিন্দু পরিবার মুর্শিদাবাদ ছেড়ে পাশের জেলা মালদায় আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন। সোমবার তাদের সঙ্গে দেখা করেন সুকান্ত মজুমদার। তারপরই তিনি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে চিঠি লেখেন। মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও এই ঘটনায় রাজ্যপালের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মালদার বৈষ্ণব নগরের পার লালপুর যান সুকান্ত মজুমদার। মুর্শিদাবাদ থেকে পালিয়ে এসে পারলালপুর হাই স্কুলে অনেক হিন্দু পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে দেখা করেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। অভিযোগ শোনেন। তাদের সঙ্গে দেখা করার পর সুকান্ত মজুমদার বলেন, যাদের বাড়িঘর ভাঙ্গা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। আমরা জেলায় জেলায় রাস্তায় নামবো। আদালতে যাব। একদিকে গণতান্ত্রিক পথে বিক্ষোভ চলবে। অন্যদিকে আইনি পথে লড়াই হবে। তারপরে রাজ্যপালকে চিঠি লেখেন সুকান্ত মজুমদার। মহিলারা তাঁর কাছে যেসব অভিযোগ জানিয়েছিলেন সেগুলি তুলে ধরেন সেখানে।
মুর্শিদাবাদের হিংসার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তাঁর দাবি, শুধু যে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এমনটা নয়, মানবতার তীব্র সঙ্কট তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদে। ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে আসা হিন্দু পরিবারগুলি এখনো আতঙ্কে রয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী দুষ্কৃতিদের হাতে বর্বরোচিত আক্রমণের শিকার হয়েছেন হিন্দুরা। ভয়ানক হৃদয়বিদারক সব ঘটনা জানিয়েছেন ওই শিবিরে থাকা হিন্দু পরিবারগুলো বলে জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার।
রাজ্যপালকে চিঠিতে সুকান্তবাবু লেখেন, ধুলিয়ান, সুতি, জঙ্গিপুর, সামসেরগঞ্জ থেকে যে গ্রাউন্ড রিপোর্ট উঠে এসেছে, তাতে ওয়াকফের প্রতিবাদের নামে হিংসা ছড়ানো হয়েছে। টার্গেট করে হামলা, গণহত্যা, শ্লীলতাহানি সহ নানা ভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে। ধর্মীয় আস্ফালনের চরম বিপদজনক প্যাটার্ন লক্ষ্য করা গিয়েছে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে। ভয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে ৪০০-রও বেশি হিন্দু। তিনি আরো বিস্ফোরক দাবি করেছেন, হিন্দুদের ইসলামে ধর্মান্তকরণ, নমাজ পড়তে বাধ্য করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তিনি।
রাজ্য প্রশাসন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বয়ে এলাকায় দ্রুত শান্তি ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এইসব পরিবারের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তাঁরা যাতে বাড়ি ফিরতে পারেন তার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন। অপরাধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিতে রাজ্যপালকে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদের সুতি, সামসেরগঞ্জ- সহ একাধিক এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যে পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশেই কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও সেখানে ছুটে গেছেন। পুলিশ দাবি করেছে, এই মুহূর্তে সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু গুজব এখনো ছড়ানো হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। গুজব ছড়ানো আটকাতে বেশ কিছু জায়গায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল।