আমাদের ভারত, ৫ জানুয়ারি: পুর-নির্বাচন স্থগিত এবং সাগর মেলায় লোক সমাগম বন্ধ করার দাবি করল এসইউসিআই। এই সঙ্গে লোকাল ট্রেন ও বাস পর্যাপ্ত সংখ্যায় বাড়িয়ে ভিড় কমানোর ব্যবস্থা এবং মদের দোকান, বার, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল ইত্যাদি পুরোপুরি বন্ধ করার দাবিও করে ওই দলের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
বুধবার এসইউসিআই’য়ের রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে লেখেন, “করোনা সংক্রমণ যে মারাত্মক হারে বাড়ছে তাতে যে কোনো মানুষই উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুদিন ধরে সংক্রমণের এই রূপের আশঙ্কা করে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন, কিন্তু নানা উৎসবে মানুষকে মাতিয়ে রাখার চেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাতে কান দেয়নি।
কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে লাগামহীন জমায়েত, জেতার পর শাসক দলের পাড়ায় পাড়ায় উৎসব সমারোহ চলেছে। এখন আবার চারটি পুরসভার নির্বাচন ও সাগর মেলায় সরকারি তত্ত্বাবধানে বিপুল জমায়েতের ব্যবস্থা হচ্ছে। যা বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যেই সরকারের জনমোহিনী নীতির নামে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফল আজ ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ঘরে ঘরে আজ করোনার সমস্ত উপসর্গযুক্ত রোগী।একদিকে পর্যাপ্ত টেস্ট হচ্ছে না, অপরদিকে সংক্রমিত মানুষের সরকারি ব্যবস্থায় টেস্ট করে রিপোর্ট পেতে বহু সময় লাগছে। ফলে সংক্রমিতদের আলাদা করার আগেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত। পজিটিভ রোগীদের জন্য সরকারি সেফ হোম এখনো নিতান্তই অপ্রতুল। বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসার সামর্থ্য বেশিরভাগ মানুষের নেই। ফলে বহু পরিবার সঙ্কটের সম্মুখীন।
এর উপর সরকারের অপরিকল্পিত ও অবাস্তব নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ সমস্যা আরো বাড়াচ্ছে। যেমন, ভিড় এড়াবার জন্য লোকাল ট্রেন ও বাসের সংখ্যা যখন বাড়ানোর দরকার— তখন তা কমানোর কথা বলা হচ্ছে। ফলে সংক্রমণের বিপদের সাথে বাদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াতের বিপদ মাথায় নিয়ে মানুষ চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছে।
লোকাল ট্রেনের সংখ্যা কমায় অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, স্কিম ওয়াকার্স, পরিচারিকা ইত্যাদি পেশার কর্মীরা চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন। স্টেশনে স্টেশনে যাত্রী বিক্ষোভ ও অবরোধ চলছে। কর্মক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ হাজিরা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম ইত্যাদি চালু হতেই চুক্তি ভিত্তিক কর্মীদের মজুরিতে কোপ পড়ছে।
রাজ্য সরকার মদের দোকান, বার, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, শপিং মল ইত্যাদি বন্ধ রাখার কথা বললেও সাগরমেলা ও ২২ জানুয়ারি চারটি পুরসভার নির্বাচনে প্রচার, সভা ইত্যাদি কোভিডের বিপদকে আরো বাড়িয়ে দেবে। ইতিমধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা করার সময় শাসকদলের সমারোহ দেখে এই আশঙ্কা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ২২ জানুয়ারির পুরসভা নির্বাচন স্থগিত করতে হবে। সাগরমেলায় লোক সমাগম বন্ধ করা হোক।
লোকাল ট্রেন ও বাস পর্যাপ্ত সংখ্যায় বাড়িয়ে ভিড় কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মদের দোকান বার রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল ইত্যাদি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। আশা করি, বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে আপনি উপযুক্ত ও কর্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।