তিমিরেই আটকে হিলি-বালুরঘাট রেললাইন সম্প্রসারণ! পূর্ত দফতরের ঢিলেমিপনার অভিযোগ তুলে হাফ ছেড়ে বাঁচার চেষ্টা রেল দপ্তরের

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৯ মার্চ: হিলি-বালুরঘাট রেললাইন সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ফের জটিলতা। একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচার চেষ্টা। রবিবার বালুরঘাট রেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে ডিআরএমের এমন মন্তব্যকে ঘিরে যথেষ্টই আলোড়ন পড়েছে। তাদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ পর্ব চটজলদি ভাবে করবার চেষ্টা করলেও কাজে ঢিলেমিপনা রয়েছে পূর্ত বিভাগের। আর যার জেরেই এগোচ্ছে না হিলি-বালুরঘাট রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ। একইসাথে সিক ও পিট লাইনের কাজের গতিও কম থাকায় ক্রমশ পিছোচ্ছে সেই কাজের শুভারম্ভ। শুধু তাই নয়, পিছিয়ে যাবার আভাস স্টেশনের বৈদ্যুতিকরণের কাজও।

এদিন বিকেলে একটি স্পেশাল ট্রেনে করে বালুরঘাট রেলস্টেশনে এসে পৌছান উত্তর পূর্ব রেলওয়ের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম শুভেন্দু কুমার চৌধুরী। প্রথমেই ঘুরে দেখেন সিক ও পিট লাইনের কাজ। যেখানে কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারের সাথে কথা বলতেই সামনে আসে দপ্তরের একাধিক জটিলতার বিষয়। চটজলদি কাজ শেষ করবার কথা বলতেই কাজ ছেড়ে চলে যাবার পালটা হুঁশিয়ারি ডিআরএমকে দিয়েছেন কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার। একইসাথে ডিআরএমের কাছে তুলে ধরেছেন দপ্তরের বিভিন্ন জটিলতার বিষয়গুলিও। আর এরপরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডিআরএম শুভেন্দু কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বয়ং ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া বালুরঘাট স্টেশনের সিক ও পিট লাইনের কাজ তড়িঘড়ি শেষ করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসে বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে সিক ও পিট লাইনের কাজ পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ শেষ করবার আশ্বাস দিয়েছিলেন ডিআরএম। কিন্তু এদিন সেই কাজ পরিদর্শনে এসে তার এমন উক্তিতে যথেষ্টই আলোড়ন পড়েছে বিভিন্ন মহলে। শুধু তাই নয়, ২৬ শে মার্চ বালুরঘাট স্টেশনের বৈদ্যুতিকরণের কাজের শুভারম্ভ হবার কথা থাকলেও তা এদিন পিছিয়ে দিয়েছেন ডিআরএম। ফলে বিদ্যুৎ চালিত রেল চালু হতে যে আরো বেশকিছুদিন সময় লাগবেই তা যেন কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ডিআরএমের কথায়।

কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম শুভেন্দু কুমার চৌধুরী বলেন, ইলেকট্রিফিকেশনের কাজ শেষ হতে আরো বেশকিছুদিন সময় লাগবে। পাশাপাশি সিক ও পিট লাইনের কাজ এপ্রিলে শেষ করবার কথা থাকলেও তা আরো প্রায় তিনমাস পিছোবে বলেই মনে করছেন। বাকিটা স্বয়ং ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া সম্ভব নয়।

এদিকে হিলি-বালুরঘাট রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ নিয়েও সামনে এসেছে নানা জটিলতা। ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক আনন্দ প্রকাশ এদিন
ডিআরএমের কাছে তারই একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রকল্পের ঢিলেমিপনা নিয়ে। গত ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সমস্ত জমিজট কাটিয়ে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবার কথা থাকলেও ক্রমশ তা পিছোতে থাকে। এদিন যে প্রশ্নের উত্তরে ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুক্রবার জেলাশাসকের সাথে সর্বশেষ মিটিং হয়েছে তাদের। যেখানে রাজ্য সরকারের তৎপরতায় জমি অধিগ্রহণ পর্ব মে মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা গেলেও শুধুমাত্র পূর্ত দফতরের ঢিলেমিপনায় কাজ আরো পিছোবে এমনটাও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ পূর্ত দপ্তর সঠিকভাবে সহযোগিতা না করায় এই রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ ক্রমশই পিছোচ্ছে।

আনন্দ প্রকাশবাবু বলেন, হিলি-বালুরঘাট রেললাইন সম্প্রসারণে শুধুমাত্র জমি নয়, অনেক বাড়িঘর পড়ছে। যেগুলি অধিগ্রহণ করবার জন্য পূর্ত দফতরের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। যাদের ঢিলেমিপনাতেই এখনও সেই কাজ তিমিরেই আটকে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *