আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ২ জানুয়ারি: “দলের কিছু নেতা মোটা টাকায় বিভিন্ন পদ বিক্রি করছে। অবিলম্বে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দলনেত্রীর কিছু ভুলের জন্য মানুষ তৃণমূলকে মানুষ ভুল বুঝছে”। এবার এভাবেই দলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লক সভাপতি বিভাস চন্দ্র অধিকারী।
আগামী ৯ জানুয়ারি হাঁসন বিধানসভার নলহাটি ২ ব্লকে জনসভা করবেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ওই সভায় বেশি সংখ্যক জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শনিবার দুপুরে একটি সভার আয়োজন করা হয় নবহিমাইতপুর গ্রামের অনুকূল আশ্রমে। সভায় দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য, ব্লক নেতা বকুল সহ বিভিন্ন বুথের সভাপতি অঞ্চল সভাপতির উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে ব্লক সভাপতি তথা অনুকূল আশ্রমের কর্ণধার বিভাস চন্দ্র অধিকারী বুথ ধরে ধরে সমস্যার কথা শোনেন। সমাধানেরও আশ্বাস দেন। জনসভায় বেশি সংখ্যক জমায়েতের নির্দেশ দেন। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “মানুষ মাত্রই ভুল হয়। মুখ্যমন্ত্রীরও কিছু ভুল আছে বলে আমি মনে করি। কারণ অনেক হিন্দু সংগঠন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের যে ইচ্ছা তা অনুভব করতে পারে না। ফলে আতঙ্কে ভোগে। কারণ সৎ সঙ্গে ছয় কোটি মানুষ দীক্ষিত। রাজ্য ১২টি আশ্রম রয়েছে ঠাকুরের। আমাদের সংগঠন চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আশ্রমে আসুন। মুখ্যমন্ত্রীকে ঠাকুরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আশ্রমে আসার জন্য চারবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি একবারও আসেননি। শুধুমাত্র একবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠিয়েছিলেন। উনার অন্তরে যে ভাব রয়েছে সেটা বোঝাতে উনাকে একবার আসা প্রয়োজন। মানুষকে বোঝানো উচিৎ উনি সর্বধর্মের মানুষকে ভালোবাসেন। ঠাকুরও সেটাই চান। তাই মাঝে মধ্যে এই সমস্ত সর্বধর্ম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন”।
এদিন দল ও প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভাসবাবু। তিনি বলেন, “দল চালান কয়েকজন ব্যক্তি। প্রশাসন দল চালায় না। মুখ্যমন্ত্রী সব সময় যদি জেলা শাসক, বিডিওদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন তাহলে নেতারা কি করবেন। ফলে দলের নেতারা সংগঠনকে মজবুত করতে পারবে না”। তবে তিনি মনে করেন, দলে যেমন সব লোক সৎ হয় না। প্রশাসনেও সবাই সৎ নয়। তারাও মানুষকে ঠকাতে চায়। অফিসাররাও কোথাও কোথাও টাকা তোলে। তাই দলকে আগে মজবুত করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহজলভ্য হলে নেতাদের সংগঠন করা মুশকিল হয়ে। তিনি বলেন, “বিধায়ক, সাংসদরা কিছু না করে ধরো লক্ষণ বলে বসে থাকবে। আর সব প্রশাসন করবে এটা জগতে কোথাও হয়নি, হবে না। এটা দিদিকে অনুভব করতে হবে। তাই প্রশাসনের কাঠামো যেমন সবল হওয়া দরকার, তেমন দলের সংগঠন সুদৃঢ় হওয়া দরকার। তবে যে সমস্ত জেলা সভাপতি লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি করে দিচ্ছেন তাদের কড়া হতে দমন করতে হবে। দিদির জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু এই সমস্ত লোকগুলোকে দেখে মানুষের পছন্দ হয় না। তাই এখনও সময় আছে দলকে স্বচ্ছ করার”।
শুভেন্দু অধিকারীর দলবদল প্রসঙ্গে বিভাসবাবু বলেন, “শুভেন্দুর আন্দোলনের দাম রয়েছে। তবে তার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্ল্যাটফর্মটা ছিল। তাকে পরিবহনমন্ত্রী করা হয়েছিল। বিভিন্ন পদে ছিল, বিভিন্ন জেলার অবজারভার ছিল বলে মানুষ তাকে চেনে। তবে তিনি যে সাংগঠনিক ব্যক্তিত্ব এটা অস্বীকার করা যাবে না”।