Suvendu, Sukanta, শুভেন্দু দায় এড়াতে চাইলেও ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক সুকান্তর

আমাদের ভারত, ১৭ জুলাই: লোকসভা নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপির ফল খারাপ হয়েছে। আর এর জন্য বেশিরভাগ নেতা কর্মীরা দায়ী করেছেন সংগঠনের দুর্বলতাকে। ভোটে জিতলেই সকলে সংগঠন দারুন মজবুত বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে সংগঠনের কাজ মাত্র ২৫ শতাংশ। রাজনৈতিক বিজ্ঞানও সেই কথা বলে। বুধবার রাজ্য বিজেপির বর্ধিত কর্ম সমিতির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমনটাই দাবি করেছেন সুকান্ত মজুমদার। ঘটনাচক্রে তার আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোট এবং বিধানসভা উপনির্বাচনের নিরিখে বিজেপির সংগঠন নিয়ে পরোক্ষে কটাক্ষ করে খারাপ ফলের দায় সুকান্ত মজুমদারের উপর চাপাতে চেয়েছেন। কিন্তু বঙ্গ বিজেপির অন্দরের খবর, লোকসভা ভোটের ৬০ শতাংশ প্রার্থী ছিল শুভেন্দুর পছন্দের। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে দলের ভিতরে চাপে পড়ে দায় এড়াতে চাইছেন বিরোধী দলনেতা।

ভোটের ফলাফলে মুষড়ে পড়া কর্মী বাহিনী হোক বা দলের অন্তর্কলহ, সব সমস্যাকে নিপুন হাতে প্রলেপ দিয়ে ঠান্ডা করে ২৬- এর নির্বাচনের সুর বেঁধে দিতে চেয়েছেন সুকান্ত মজুমদার এই বৈঠক থেকে। বুধবার রাজ্য বিজেপির কর্ম সমিতির বৈঠকে দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তায় সুকান্ত বলেছেন, “আমাদের মধ্যে মতোবিরোধ থাকতে পারে, কাজ করতে গেলে তা হয় কিন্তু মনোবিরোধ নেই। তা থাকা উচিতও নয়।”

একদিকে যখন সুকান্ত মজুমদার আবার উঠে দাঁড়ানোর লড়াইতে দলের নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান করেছেন, সেখানে কর্ম সমিতির বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, তিনি বিরোধী দলনেতা। তিনি সংগঠনের দায়িত্বে নেই। অনেকের মতে, শুভেন্দু লোকসভা ভোট এবং তার পরে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের পরাজয়ের দায় সংগঠনের নেতা সুকন্তর উপর প্রকারান্তরে চাপিয়ে দিয়ে দায় এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। অথচ দলের অন্দরের খবর চাপে পড়ে শুভেন্দু নিজের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। কারণ সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের বিজেপি প্রার্থীদের ৬০ শতাংশ ছিল শুভেন্দুর পছন্দের। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তার মতামত গৃহীত হয়েছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। যার ফল নিরাশাজনক হয়েছে।

ফলে আগামী দিনে বঙ্গ বিজেপির এই দুই নেতৃত্বে এহেন ভিন্ন ছবি রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে বড় কোনো ইঙ্গিত হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

কর্ম সমিতির বৈঠকের দিন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীর সব কা‌ সাথ সব কা বিকাশের মতো স্লোগানকে শুভেন্দু বন্ধ করে তার বদলে নতুন স্লোগান আমদানি করতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি দলের সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তা দল কখনোই অনুমোদন করে না বলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। এক্ষেত্রেও বিজেপির মতো দলের কেন্দ্রীকতা বা শৃঙ্খলার ঐতিহ্যকে ধরে রেখে সুকান্ত শুভেন্দুকে বার্তা দিয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮টি আসন জিতেছিল দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন বিজেপি। ২০২৪ সালে সুকান্ত নেতৃত্বাধীন বিজেপি কমে হয়েছে ১২। এই নিয়ে ভোটের পর থেকে দলের ভেতরে বাইরের নেতারা বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্র বদল করা এবং ভোটে পরাজিত হয়ে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি কাঠি করার কথা বলেছেন। ফল ঘোষণার পর গত দেড় মাসে একাধিক নেতার একাধিক বক্তব্য প্রকাশে এসেছে। বিজেবির শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক বাঁধনী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে বুধবার দলের বৈঠকে ঐক্যের বার্তাই দিতে চেয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। সুকান্ত মজুমদার গোটা দলকে উজ্জীবিতে করতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, সংখ্যা তথ্যের বিচারে আমরা হয়তো ১৮ থেকে ১২ হয়েছি তা গ্রহণ করতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু এই সাময়িক পিছিয়ে যাওয়া দেখে অনেকে বলছেন, বিজেপি হেরে গিয়েছে। আমি মনে করছি বিজেপি হেরে যেতে পারে, কিন্তু হারিয়ে যায়নি। এখনো বাংলার রাজনীতিতে বিজেপি একই রকম প্রাসঙ্গিক রয়েছে।” সুকান্ত মজুমদার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভোট শতাংশের নিরিখে বিজেপি একপাও পিছিয়ে যায়নি। ফলে ২৬ ক্ষমতা দখলের লড়াইতে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছেন দায়িত্বশীল বঙ্গ বিজেপি সেনাপতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *