স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি জড়িয়ে সিমলা ব্যায়াম সমিতির প্রাঙ্গনে

আমাদের ভারত, কলকাতা, ৭ অক্টোবর: স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বর্গীয় অতীন্দ্রনাথ বসু ১৯২৬ সালে বাংলা তথা ভারতবর্ষের সর্ব্বপ্রথম সর্বজনীন দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন সিমলা ব্যায়াম সমিতির প্রাঙ্গনে।

সর্বজনীন দুর্গোৎসব আয়োজনের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য ছিল শক্তিপুজোর আরাধনার মধ্য দিয়ে বাংলার তৎকালীন যুবশক্তিকে সংগঠিত করা, যারা তৎকালীন ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে।

তৎকালীন দেশবরেণ্য রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ যথা দেশপ্রিয় যতীন্দ্রনাথ বসু, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস, শরৎচন্দ্র বসু, সুরেশ চন্দ্র মজুমদার, মাখনলাল সেন, ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়, কিরণ শঙ্কর রায় ও আরও অনেকে সিমলা ব্যায়াম সমিতিতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন।

সমিতির মহিলা সদস্যগণ স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম সারিতে ছিলেন- উর্মিলা দেবী, মোহিনী দেবী, জ্যোতির্ময়ী গাঙ্গুলি, ইলা সেন, শান্তি দাস, ইন্দিরা দেবী, বীনা দাস, কল্পনা দত্ত(যোশী) প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ।

এই পূজার প্রথম পূজারী ছিলেন ডাক্তার চপলাকান্ত ভট্টাচার্য। প্রথম বর্ষে প্রতিমার রূপদান করে স্বর্গীয় নিতাই চন্দ্র পাল মহাশয়। প্রথম দিকে প্রচলিত মতে একচালায় প্রতিমা গড়া হয়। হোগলা পাতার ছাউনি দেওয়া পূজামন্ডপ তৈরী হতো। ১৯৩৯ সালে নতুনভাবে একই বেদীতে রেখে ৫ টি পৃথক চালচিত্র করা হয় ও প্রতিমাগুলিকে পৃথকভাবে স্থাপন করা হয়।

স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যম ভ্রাতা স্বর্গীয় মহেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় বিভিন্ন সংস্কৃত শ্লোকের উদ্ধৃতিদ্বারা অতীনবাবুর এই কাজকে সমর্থন করেন। ওই বছর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু মহাশয় প্রতিমার আবরণ উন্মোচন করেন। দুর্গাপুজোয় এক বিরাট অন্নকূটের আয়োজন করা হতো। নেতাজী, শরৎচন্দ্র বসু এবং অন্যান্য অনেকে এই অন্নকূটে সাধারণ দর্শকগণের সঙ্গে পংক্তি ভোজে অংশগ্রহণ করে প্রসাদ গ্রহণ করেন।

প্রথম দিকে সিমলা ব্যায়াম সমিতির প্রতিমাকে খাদি বস্ত্র পরানো হতো। যে কারনে ব্যায়াম সমিতির প্রতিমাকে বিদ্বগ্ধ মহলে “স্বদেশী পুজো” আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।

স্বাধীনতার পরবর্তী যুগে সিমলা ব্যায়াম সমিতির বর্তমান সদস্য সদস্যারা তাঁদের পূর্বসূরীদের স্থাপন করা এই সমিতির ঐতিহ্য রক্ষায় আপ্রাণ প্রচেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর শুভ জন্মাষ্টমীর দিন সকালে সমিতির ৯৮ তম দুর্গোৎসবের মাতৃ প্রতিমার কাঠামো পূজা অনুষ্ঠিত হয় কালীঘাট মাতৃ মন্দিরে। ৯৮ তম বছরের সার্ব্বজনীন দুর্গোৎসবের প্রতিমা নির্মাণের গুরুভার রয়েছে ভাস্কর সনাতন রূদ্র পাল মহাশয়ের হাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *