সাথী দাস, পুরুলিয়া, ২৯ ডিসেম্বর:
পুরুলিায় আনন্দ মঠ সরকারি হোমে আবাসিকদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়াল। পুরুলিয়া শহরের কাছে শিমুলিয়ায় আনন্দমঠ জুভেনাইল হোমের নাবালিকারা এই অভিযোগ এনেছেন। হোম কর্তৃপক্ষের মদতেই তাঁদের উপর নির্যাতন চলে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ নিয়ে পুরুলিয়া জেলা আদালতের এক বিচারকের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতে হোমের সুপারিনটেনডেন্ট-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছে পুরুলিয়া সদর মহিলা থানার পুলিশ। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
অভিযোগ যাচাই করে দেখতে সম্প্রতি নিজেই হোমটিতে যান পুরুলিয়া জেলা আদালতের ওই বিচারক। সব কিছু শুনে তিনি নিজেই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এবং পুলিশকে বিষয়টি জানান, তাতেই তদন্ত শুরু হয়। জেলাশাসক অভিজিৎ মুখার্জি ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ আসার পরেই গত বৃহস্পতিবার ওই হোমে যান পুরুলিয়া জেলা আদালতের ওই বিচারক। নাবালিকা আবাসিকদের কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপারকে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। এর পরেই তদন্তে নামে পুলিশ। নির্যাতিতারা পুলিশকে জানিয়েছেন, বেশ কিছু দিন ধরে ওই হোমে তাদের উপর যৌন নির্যাতন চলছে। এক বহিরাগত অজ্ঞাত পরিচয় যুবক হোমে এসে কর্তৃপক্ষের মদতে এই যৌন নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় ‘শিশির কাকু’ নামে একজন জড়িত রয়েছেন বলে আবাসিকরা পুলিশকে জানিয়েছেন। সোমবার ওই হোমের একাধিক নাবালিকা পুরুলিয়া আদালতে গোপন জবানবন্দিও দেয়। তাদের ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়েছে।
তবে এই হোম নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। বাম আমলেও নানা কারণে খবরের শিরোনামে উঠে আসে এই হোমটি। হোমের পাঁচিল টপকে নাবালিকাদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তার পর হোমের পাঁচিল উঁচু করা হয়। নজরদারি চালাতে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশ। বসানো হয়েছিল সিসিটিভি। পরে অবশ্য পুলিশ শিবির তুলে নেওয়া হয়। নষ্ট হয়ে যায় সিসিটিভি। অতীতেও এই হোমে যৌন নির্যাতনের খবর শোনা যেত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কিন্তু আগে কখনও তা প্রকাশ্যে আসেনি। তাই এ বারের ঘটনায় কাঠগড়ায় স্থানীয় প্রশাসন। প্রশ্ন উঠছে, বাইরে রক্ষী মোতায়েন থাকার পরেও হোমের ভিতরে কীভাবে দিনের পর দিন সন্ধ্যার পর ওই বহিরাগত যুবক ঢুকত? এই বিষয়ে হোম কর্তৃপক্ষ একেবারেই নীরব।