আমাদের ভারত, ২১ নভেম্বর: যৌনতা বিহীন বিবাহিত জীবন যাপনকারীর সংখ্যা বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে। ভারতে ২০০৪ সালের সমীক্ষায় দেখাগেছে বিবাহিত দম্পতিদের ৩৭ শতাংশের সপ্তাহে একবারের বেশি যৌনমিলনের অভিজ্ঞতা হলেও সংখ্যাটি এখন কমে ২০ এর নিচে নেমেছে।
আমেরিকায় ১৯৯৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল ২ শতাংশ বিবাহিত দম্পতি গত এক বছরে একবারও সেক্স করেননি। আর ২০ শতাংশ আমেরিকান বিবাহিত দম্পতি বছরে ১০ বারের কম সেক্স করেছেন।
ভারতে সেক্সবিহীন বিবাহিত জীবন যাপনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বলা হয়- তরুণরা মনে করে শারীরিক মিলন কোনো জরুরি বিষয় নয়। বিশেষ করে বিত্তের পেছনে ছুটে বেড়ানো দম্পতিদের কাছে অনেক বেশি দরকারি হল অফিসের প্রমোশন, বড় ব্যবসা, বসকে খুশি করা, অফিসের গাদা গাদা কাজ করা, দামী গাড়ি কেনা, ভালো রেস্টুরেন্টে খাওয়া, সন্তানকে দামি স্কুলে পড়ানো এবং সেগুলো নিয়ে গল্প করা। দিনে এতো বেশি কাজের তালিকা তাদের থাকে যে দিনের শেষে তালিকায় শেষের দিকে থাকা সেক্স ঘুমের মধ্যেই চলে যায়।
অনেকে আবার মনে করেন সেক্স হলো রাজা বাদশা, শেখ আর অলস মানুষদের জন্য। কেউ কেউ অলস শব্দের প্রতি আপত্তি জানিয়ে বলে থাকেন বেকার মানুষদের জন্য হল সেক্স। তাদের যুক্তি, সেক্স করার জন্য যে পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেটা কর্মজীবী মানুষের জন্য কঠিন। অন্যপক্ষ বলে, বিবাহিত জীবনে আবার সেক্স ছাড়া শুধুমাত্র ভালোবাসা কিভাবে হয়! এর একটি জবাব বোধহয় এমন যে, বিয়ে আর ভালোবাসা যেমন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত তেমনি সেক্সও।
গবেষকরা দেখেছেন যে, বিয়ের তিন বছর পরে বিবাহিত জীবনে সেক্সের ভূমিকার পতন ঘটে। এজন্য অবশ্য দম্পতিদের মধ্যে একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতাও দেখা যায়। কেউ কেউ নিজেদের জীবনের ব্যস্ততার কথা বলেন। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এক ঘরে দিনের পর দিন না থেকে বরং সম্ভব হলে বউকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে কিংবা নিজে বাড়ি ছেড়ে ঘুরে এলে বিবাহিত জীবনে সেক্সের ভূমিকা বাড়তে পারে। অর্থাৎ শেয়ার বাজারের পতন না ঠেকানো গেলেও বিবাহিত জীবনে সেক্সের পতনের সমাধান আছে।
সদ্য বিবাহিত দম্পতিদের সুস্বাস্থ্য, বিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে ও সংসারে সুখ-শান্তি অব্যহত রাখতে কী করা উচিত তা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস। রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্ত্রীকে খুশি রাখতে মাসে অন্তত ১১ বার মিলিত হওয়া উচিত দম্পতিদের। কারণ, সমীক্ষা বলছে মাসে চার থেকে পাঁচবার মিলিত হওয়া দম্পতিদের মধ্যে এক ধরনের অসুখী ভাব থাকে। সেই তুলনায় সুখী দম্পতিরা মাসে অন্তত ১১ বার মিলিত হন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিয়ের প্রথম দুই বছর কেটে যাওয়ার পর দম্পতিদের জীবন খানিকটা থমকে যায়। বিয়ের পর যে উদ্দামতার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী মিলিত হন, সেই জোশ থাকে না। কিন্তু এটি একেবারেই করা উচিত নয়। দম্পতিদের মধ্যে খুনসুটি ও রোম্যান্স আগের মতোই থাকা উচিত।
কথায় বলে—পুরুষ মানুষ দুই প্রকার। জীবিত আর বিবাহিত। সত্যিই কি বিয়ের পর পুরুষের সুখ চলে যায়? তাঁদের মন বিষিয়ে ওঠে? কিন্তু উপায় কী। বিশেষজ্ঞরা বের করেছেন, বিবাহিত কিংবা দাম্পত্য জীবনে কীভাবে সুখে থাকা যায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে ‘সম্পর্ক’ বিশেষজ্ঞ টি তাশিরো বলেছেন, আপনি যদি অসাধারণ কাউকে পেতে চান, তাহলে আপনার জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে।
তাশিরোর যুক্তি হলো—টাকা-পয়সা, সৌন্দর্য বিবাহিত জীবনকে সুখী করতে পারে না। অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তাঁর মতে, একটি ভালোবাসাময় সুখি বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবার মধ্যে যে গুণটি থাকা প্রয়োজন, তা হলো—আন্তরিকতা। আন্তরিক বলতে তিনি এমন কাউকে বুঝিয়েছেন, যিনি হবেন বিনীত, নমনীয়, বিশ্বাসযোগ্য, ভালো স্বভাব, সহযোগী মনোভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, উদার ও ধৈর্যশীল।
আরএক দল গবেষক মনে করে, ভালোবাসাই একজন নারী ও একজন পুরুষের মাঝে হৃদয়ের অটুট বন্ধন তৈরি করে। তৈরি করে সাংসারিক বন্ধন। ভালোবাসা ছাড়া কোনো সাংসারিক কিংবা দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজন শূন্য, ফাঁকা।
তাই দুজন দুজনের প্রতি মায়া-মমতা ও ভালোবাসা থাকতে হবে। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে কল্পনা করা যায় না। তাই যত বিপত্তি আসুক না কেন দুজন দুজনকে বুঝতে হবে। ছাড় দিতে হবে। আর ভালোবাসা থাকতে হবে। দেখবেন দাম্পত্য জীবনে সুখ কাকে বলে।
বাচ্চা কাচ্চা সেক্স জীবনে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শহুরে জীবনে অনেকসময় বাচ্চা বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকে। ছোট শিশুকে সামলানোর ধাক্কা সামলে সেক্স করার মতো মানসিকতা আর থাকে না। এখন যে কারণটা বলব সেটা বেশ নতুন ধরনের। ফ্যান্টাসির নষ্ট প্রভাব। টিভি চ্যানেল আর ইন্টারনেটের কল্যাণে যেসব যৌন ছবি দেখে থাকেন দম্পতিরা তারা ব্যক্তিগত জীবনেও তেমন কিছু করতে চান যা বাস্তবসম্মত নয়, কিন্তু বিবাহিত জীবনের যৌন জীবনে তার প্রভাব পড়ে থাকে। ফ্যান্টাসির জগতে থাকার ক্ষেত্রে নারীদের চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে। ফলে তাদের দিক থেকে সেক্সে অনীহা তৈরি হয়। যার প্রভাব বিবাহিত জীবনে পড়ে থাকে।
সাইকোথেরাপিস্ট গ্যারি নুম্যান বলছেন, ‘রোজকার একঘেয়ে জীবনযাপন, সন্তানের অসুস্থতা, কম ঘুমের কারণে এমনিতেই স্বামী-স্ত্রীর মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। দম্পতিদের মধ্যে ঝগড়া মেটাতে মিলন ম্যাজিকের মতো কাজ করে।’