আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৪ নভেম্বর: রবিবার কলকাতায় দিনভর অনুষ্ঠান ও আলোচনার মাধ্যমে পালিত হল দ্বিতীয় বিহার বাঙলাভাষী সম্মেলন। বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান, উদ্বোধনী সঙ্গীত, স্বাগত ভাষণ, সহযোগী আয়োজকদের বক্তব্য, সম্মাননা প্রদান প্রভৃতি ছাড়াও ছিল আলোচনা সভা।
প্রথম আলোচনার বিষয় ছিল ‘বেহার হেরাল্ড ১৫০ বছর: বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতা।’ এই পর্যায়ে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক বিনায়ক ভট্টাচার্য। বিহারের সাংবাদিকতার বিদ্রোহের ইতিহাস’ নিয়ে বলেন দেবারুণ রায়। ‘সাংবাদিকতা ও নৈতিকতা’ নিয়ে আলোচনা করেন শ্যামল ভট্টাচার্য।
এর পর ‘নন্দনকানন পুনরুদ্ধারের ৫০ বছর: গৌরবের সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতি ছিলেন নীতীশ বিশ্বাস। ‘আমরা বিদ্যাসাগরের জমি বিক্রি করেছিলাম’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ক্যাপ্টেন দিলীপ কুমার সিনহা। ‘বিদ্যাসাগরের কর্মাটাঁড়: বাঙালির নতুন বারাণসী’ নিয়ে বলেন অধ্যাপক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়।
আলোচনার তৃতীয় পর্ব ‘সঞ্চিতা পত্রিকা ৫০ বছর: বহির্বঙ্গের পত্রপত্রিকা’-তে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত। ‘বিপ্রতীপের নিভৃতচর্চা’ নিয়ে বলেন শ্যামল শীল। বর্হিবঙ্গের পত্রিকার হাসি-কান্না নিয়ে বলেন অধ্যাপক কাশীনাথ চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিহার বাঙালি সমিতির সুনির্মল দাস জানান, “বিহার হেরাল্ড-এর ১৫০ বছর পূর্ণ হলো। ১৮৭৪ সালে পাটনা হাইকোর্টের খ্যাতনামা আইনজীবী এবং সমাজসেবী গুরুপ্রসাদ সেন প্রতিষ্ঠা করেন বিহারের প্রথম এবং ভারতের পঞ্চম ইংরেজি সংবাদপত্র ‘বিহার হেরাল্ড’। সেই সময় বাংলায় প্রদেশের নামটা ‘বেহার’ বলা ও লেখা হত বলে সংবাদপত্রটির নামকরণে ‘বেহার’ বানানটি রয়ে গেছে। ১৯৩৮ সালে সেটি নবগঠিত বিহার বাঙালি সমিতির হাতে সমর্পণ করেন তৎকালীন মালিক রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র সমাদ্দার মহাশয়। তারপর থেকে আজ অব্দি ‘বিহার বাঙালি সমিতি’ বা ইংরেজিতে ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন, বিহার’ সংবাদপত্রটির মালিক এবং ব্যবস্থাপক। আর্থিক অনটনে মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়েছে, আবার শুরু হয়েছে। নবপর্যায়ে সংবাদপত্রটি শুরু হয়েছে ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই থেকে। যেহেতু সংবাদের জগৎ এখন বদলে গেছে, বৈদ্যুতিন এবং সামাজিক মাধ্যমে ২৪x৭ সচল, তাই ‘বিহার হেরাল্ড’ কিছু বিশেষ ধরনের ফিচার নিয়ে চলে। ইতিমধ্যে উইকিপিডিয়া বাংলার সহযোগিতায় বিহার হেরাল্ডের বিগত প্রায় একশ’ বছরের বাঁধাই সংখ্যাগুলো স্ক্যান করে আপলোড করা হয়েছে। এখন সে সংখ্যাগুলো পাব্লিক ডোমেইনে– আপনারা চাইলে ডাউনলোড করে পড়তে পারেন। কোভিড পর্বে সংবাদপত্রটি শুধু অনলাইনেই প্রকাশিত হতে থাকে। আর্থিক অনটন এবং বিজ্ঞাপনের অভাবে এখনও অনলাইনেই প্রকাশিত হয়- (https://beharherald.wordpress.com )। আগ্রহী পাঠক হোয়াটস্যাপ নম্বর দিলে তাঁকে সংবাদপত্রটি নিয়মিত পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়।
বিহার বাঙালি সমিতির মুখপত্র ‘সঞ্চিতা’-র ৫০ বছর হলো। ১৯৭৪ সালে একটি অনন্য সাহিত্য ত্রৈমাসিক রূপে পত্রিকাটি শুরু হয়। কিন্তু বিহারের সাহিত্য জগত ক্ষীণ, ক্ষীণতর হয়ে আসায় আপাতত বহু বছর ধরে পত্রিকাটি মাসিক সাংগঠনিক বুলেটিন। মাঝে মধ্যে বিশেষ অবসরে, যেমন কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা, বিদ্যাসাগর জন্মদ্বিশতবার্ষিকী ইত্যাদিতে সাহিত্য-সংখ্যা প্রকাশিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গৌরবের কথা যে বিহার বাঙালি সমিতি অর্দ্ধশতাব্দীকাল ধরে পত্রিকাটি প্রকাশ করে চলেছে এবং বিহারের বাঙালিদের ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সার্বজনিক সম্পত্তি রক্ষার সংগ্রামে, বিহারের বিভিন্ন জেলায় পুনর্বাসিত উদ্বাস্তু বাঙালিদের প্রাপ্ত জমির স্বত্বাধিকার-পত্র, জাতি প্রমাণপত্র ইত্যাদির সংগ্রামে সঞ্চিতা নিজের কর্মভার ও দায়িত্ব যোগ্যতার সঙ্গে সম্পাদন করে চলেছে। কোভিডের পর এ পত্রিকাটিও এখন শুধু অনলাইন। হোয়াটস্যাপ নম্বর দিলে তাঁকে পিডিএফে পত্রিকা পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়। ‘সঞ্চিতা’য় পাত্র-পাত্রী সংবাদ থাকে।
এ ছাড়াও ‘ভাষাতীর্থ’-র ৫০ বছর হলো। বর্তমান ঝাড়খন্ডের জামতাড়া জেলায়, কর্মাটাঁড় গ্রামে ‘নন্দনকানন’ নামে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাড়ি আছে— এ খবরটা বিহার বাঙালি সমিতি পায় ১৯৭৩ সালে। বাড়িটি সন্ধান ক’রে তদানীন্তন মালিকদের কাছ থেকে বিহার বাঙালি সমিতি সম্পত্তিটি ১৯৭৪ সালের ২৯ মার্চ কিনে নেয়। সে কর্মপ্রয়াসের বিশদ ইতিহাস অন্যত্র লভ্য। ক্রয়ের পর থেকেই বিহার বাঙালি সমিতি ‘নন্দনকানন’ সম্পত্তিটিকে প্রথমে বেআইনি অধিগ্রহণ-মুক্ত করার, সুরক্ষিত করার এবং বাঙালিদের ভাষাতীর্থ রূপে বিকশিত করার চেষ্টা করে চলে। এ প্রচেষ্টায় বিহার সরকারও সহযোগিতা করে। বিহার বাঙালি সমিতির অনবরত প্রয়াসে কর্মাটাঁড় রেল স্টেশনের নাম ১৯৭৮ সালে বিদ্যাসাগর রেল স্টেশন করা হয়।
নতুন সহস্রাব্দে বিহার থেকে ঝাড়খন্ড বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ২০১৭ সালে নতুন করে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি তৈরি করা হয় এবং পঞ্জিকৃত হয়। এখন বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির তত্ত্বাবধানে দুই শরিক, বিহার বাঙালি সমিতি এবং ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতি ‘নন্দনকানন’-এর দেখাশোনা করে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল অব্দি বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি ‘বিদ্যাসাগর দ্বিশতবর্ষ’ উদযাপন করে। বিদ্যাসাগর চেতনাযাত্রা সংগঠিত করে। এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতার সঙ্গে যুগ্মপ্রয়াসে নানান কর্মসূচি পালন করা হয়।
‘ভাষাতীর্থে’ বর্ণপরিচয়ে মায়ের ভাষা শেখা সব বাঙালির সাহায্যের প্রসারিত হাত এখানে প্রত্যাশিত। বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতির তহবিলে দান আয়কর মুক্ত। কম সময়ের পর্যটনের জন্য আদর্শ স্থান নন্দনকানন। থাকা এবং খাওয়ার সুবিধা আছে। ভাষাতীর্থে আসুন! বাংলার নবজাগরণের সম্প্রসারিত পরিধিতে, প্রত্যন্ত আদিবাসী জীবনে নিজের ও দেশের আত্মপরিচয় সন্ধান করুন।
এদিনের সম্মেলনের সহ-আয়োজক ছিল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ ভাগলপুর, সর্বভারতীয় বাংলা ভাষামঞ্চ, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন কলকাতা শাখা, বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্থা ভিলাই, মেদিনীপুর ডট কম।
বিহার বাংগালী সমিতির মাননীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদাধিকারী গনের উদ্দেশ্য করে আমার এই ছোট প্রতিবেদন
প্রথম বর্ষের সম্মেলনে আমি উপস্থিত ছিলাম। তখন ও আমি আমার মতামত জানিয়ে ছিলাম।
এই বছর গত রবিবার আমি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐদিন সম্মেলনে র শ্রোতা র সংখ্যা দেখে খুব হতাশ হয়েছি।
বিষেশ করে অনুষ্ঠান এর ধরন ও Events এর Choice গুলো একদম ই ভালো হয় নি। মানুষের কাছে সময় ও ধৈর্য নেই বলে বহু বছর ধরে সিনেমা ও দু ঘন্টা র বেশি হয় না। আমাদের এই ছ ঘন্টা একঘেয়েমি অনুষ্ঠান কারোরই শোনা দেখার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকে না।
এতো বেশি বক্তা ও শিল্পী দের একদমই ডাকা উচিত হয়নি। এই কারণে ওঁদের আমারা উচিত সময় ও সুযোগ দিতে পারিনা। এতে আমাদের প্রতি ওনাদের ধারণা খারাপ হয়। ভবিষ্যতে ওঁদের কাছে আমরা অনুরোধ করতে লজ্জাবোধ হবে।
আমি গতবছর ই বার বার বলে ছিলাম অন্য প্রদেশে ও বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এই সম্মেলন যদি করা হয় তাহলে এখান কার স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশেষ করে এখান কার সরকারের কাছে মেসেজ যায়।
আমার অনুরোধ আগামী বছর যদি এই অনুষ্ঠান করা হয় তাহলে তাহলে খুব ভালো করে করা উচিত, আর নাহলে হাঁসির পাএ হওয়ার দরকার নেই
আরো কয়েকটি কথা আছে যেগুলো এখানে লেখা উচিত হবে না। দেখা হলে সব কথা হবে।
নমস্কার। উৎপল কুমার দাশ