অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ১১ ফেব্রুয়ারি:
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (‘আত্মজীবনী’), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (‘জীবনস্মৃতি’), শিবনাথ শাস্ত্রী (‘আত্মচরিত’), মীর মশারফ হোসেন (‘আমার জীবন’)— যুগে যুগে অসংখ্য আত্মকথায় পুষ্ট হয়েছে বাংলা পুস্তকসম্ভার। সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন মননের লেখক কলম ধরেছেন নিজের কথা দুই মলাটের মধ্যে ধরে রাখতে। এরকম সাম্প্রতিক বইগুলোর অন্যতম সত্যগোপাল দে-র আত্মজীবনীমূলক ‘এক জীবন উন্নয়ন’।
সুন্দর, পরিস্কার ছাপা-ছবির বই। এনজিও ক্ষেত্রের না জানা বা আপাত অজানা হরেক কথার একটা অমূল্য দস্তাবেজ এটি। পাহাড়, তরাই, জঙ্গল, জনপদ— যেখানে সভ্যতা থমকে আছে, সেখানেও কীভাবে ওঁরা ছুটে যান, অন্য কর্মক্ষেত্রের মত এই সেবাক্ষেত্রেও কতটা সক্রিয় ঘরোয়া রাজনীতি, সেক্টরের কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা কতটা— সহজ সরল ভাষায় তার আখ্যান তুলে ধরেছেন সহজ সরল মানুষ সত্যগোপাল দে।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরের নানা প্রতিষ্ঠানে। যেমন লুথেরার্ণ ওয়ার্ড সার্ভিস, রামকৃষ্ণ মিশন লোকশিক্ষা পরিষদ, চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (ক্রাই) এবং বর্তমানে বিক্রমশীলা এডুকেশন রিসোর্স সোসাইটি। সমাজকল্যাণ এবং মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণের নানা কাজের পাশাপাশি নিরন্তর বিভিন্ন, দৈনিক ও পত্রপত্রিকায় লেখেন। পেয়েছেন ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একাধিক স্বীকৃতি। বিখ্যাত জোশ টক প্ল্যাটফর্মে অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তা হিসাবে তাঁর দর্শকের সংখ্যা ইউ টিউবে দেড় লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে।
‘এক জীবন উন্নয়ন’-এ মোট ২৫টি অধ্যায়। ‘শুরুটা তবে করাই যাক‘, ‘মুখের আড়ালে’, ‘নৈঃশব্দের শব্দ’, ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’— এরকমই অন্য ধরণের নানা শিরোনাম। পড়তে পড়তে পাঠক নিজেই যেন হারিয়ে যাবেন কখনও জঙ্গলমহলে, কখনও আমবাড়ি ফালাকাটায়, কখনও মণিপুরের গ্রামে।
শুভ্র বিশ্বাস (সহপাঠি ভগবান), জীবনের প্রথম বন্ধু কৃষ্ণা, চণ্ডী বাসকে, লক্ষী মুর্মু, প্রফুল্ল সেন, মধুবাবু (আশুতোষ গুছাইত), মহাদেব মাঝি, পবন হাঁসদা, গুরুদেব শ্রী শ্রী সুদীন কুমার মিত্র, ফুলপিসি, কৃষ্ণ সিংহ মোক্তান, শুভ্রা চ্যাটার্জি— অনেক চরিত্র এসে ভিড় করেছে স্মৃতিচারণে। ৮ বছর বয়সে অর্থ না বুঝে সদ্য শেখা ‘শুয়ার কা বাচ্চা’ বলে বাড়িতে সর্বসমক্ষে ছোটমামাকে সম্ভাষণ করার ঘটনার কথা জেনে যে কোনও গোমরামুখোও হেসে দেবেন।
‘কিন্তু বাবার কথা’-র মধ্যে দিয়ে বাবার প্রতি নিখাদ শ্রদ্ধা যেমন ফুটে উঠেছে, ‘মা আছেন আর আমি আছি’-তে পাঠকদের সামনে পরিচয় করিয়েছেন গর্ভধারিনী মা, সারদা মা, মাদার টেরিজা এবং রূপালি মাকে। স্ত্রী মালার কথা এসেছে বারবার। পুত্র-কন্যা-নাতনির কথাও এসেছে নানা প্রসঙ্গে। সবশেষে উল্লেখ করতেই হয় ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের লেখা মনোগ্রাহী ভূমিকার।
প্রকাশক- পত্রভারতী। মূল্য ১৮০/