রাজেন রায়, কলকাতা, ৮ জানুয়ারি: সরাসরি মুখে কিছু না বললেও তৃণমূল এবং সরকারি সমস্ত অনুষ্ঠান থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন বিশিষ্ট অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। এক সময় কলেজজীবনে চুটিয়ে এসএফআই করলেও পরে তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। কিন্তু চলচ্চিত্র উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী এবং আয়োজক রাজ চক্রবর্তীর আহ্বানের পরেও তাঁর অনুপস্থিতি বাড়িয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে জল্পনার পারদ।
শুক্রবার নবান্ন সভাঘর থেকে ভার্চুয়ালি কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তীও রুদ্রনীলকে আসার জন্য রাজি করাতে পারেননি। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে না আসার কারণ হিসেবে রুদ্রনীল জানান, ‘ব্যক্তিগত কিছু কাজ আছে৷ তাই আমি যেতে পারছি না। আমাকে রাজ আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।’
তবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে রুদ্রনীল ঘোষ সংবাদমাধ্যমে বলেন “আমফান, অতিমারীর পর বাংলার অর্থনীতির অবস্থা ভয়ঙ্কর। নিঃসন্দেহে উৎসব থাকবে। তার আগে তো পেটে ভাত থাকতে হবে। তারপর না উৎসব! কত মানুষ রাস্তায় ধর্না দিচ্ছেন। মিছিল করছেন। না খেতে পেয়ে বসে রয়েছেন। এই সঙ্কটে চলচ্চিত্র উৎসবে যতটুকু টাকাই খরচ হোক না কেন, সেটা যদি সরকার তাঁদের হাতে তুলে দিত, ভাল করত।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে দূরত্ব তৈরি করতেই কি এই পদক্ষেপ? রুদ্রনীল জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই, উল্টে শ্রদ্ধা আছে।” পাশাপাশি রুদ্র এ–ও বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘চাল চোর পার্টি’-র ‘সাতেপাঁচে’ তিনি আর নেই। চাঁছাছোলা বক্তব্যে রুদ্র জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের একাংশই এখন তাঁর কথা শোনে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে থেকে চাল চুরি করে। পোকা ধরা চাল রেশনে পৌঁছে দেয়।” অভিনেতার আক্ষেপ, বহুবার বলেও কোনও কাজ হয়নি। অপরাধীর কোনও শাস্তি হয়নি। আর সেকারণেই নিজেকে একটু একটু করে গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকলেও তৃণমূল নেতা কর্মীদের একাংশ তাঁর কথা শুনছেন না বলে আক্ষেপ করেন রুদ্রনীল৷ একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে আইন মেনে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না৷
গত বুধবার রুদ্রনীল ঘোষের জন্মদিনে বিজেপির যুব নেতা বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ছিলেন। শুধু তাই নয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান বলেও ওই বিজেপির যুব নেতা রুদ্রনীলকে জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনেও সাড়া দিয়েছেন রুদ্রনীল। তবে শুক্রবার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেছেন টলিউডের অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘ফিল্ম ফেস্টিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় পরিবর্তন হয়েছে। আমার কিছু নির্দিষ্ট কাজ আগে থেকেই ছিল। তাই আমি যেতে পারিনি।’ এর আগেও চার-পাঁচবার তিনি কাজ থাকার কারণে অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। যদিও এ বছরের অনুষ্ঠান ছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে। তারপরও এবারে তার উপস্থিত না থাকা স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে বাড়িয়েছে গেরুয়া যোগের জল্পনা।