ছেলের জন্মদিনেই স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ অসহায় মা

আমাদের ভারত,২১ জানুয়ারি:ছেলের জন্মদিনের দিনই অসুস্থ ছেলে ও নিজের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন নিয়ে মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হলেন এক অসহায় মা। এমনি এক বেদনাদায়ক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল শিল্প শহর দুর্গাপুর।

বয়স সবে ৩৩। একটা সময় পাড়ায় জেরক্সের দোকান চালিয়ে রোজগার শুরু করেছিল তুষার। কিন্তু ঝকঝকে জীবনের স্বপ্ন ভাগ্যের পরিহাসে বদলে যায় এক নিমিষে। সে আজ প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের করুন পরিনতির দিকে। আর মা হয়ে কিছু করতে পারছেন না বন্দনা দেবী। সহায় সম্বলহীন মা চারিদিকে ছেলের চিকিৎসার জন্য হাত পেতেছেন। কিন্তু না,কেউ এগিয়ে আসেনি। সরকার, প্রশাসন, পুরসভা কেউ না। তাই চোখের সামনে তিল তিল করে ছেলে মৃত্যু দিকে এগিয়ে যাক আর দেখতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মহকুমা শাসকের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন নিয়ে হাজির হন তিনি।

দুর্গাপুর পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের আটা রিয়াল রোডের বাসিন্দা বন্দনা সাঁপুই। স্বামী পরিমল চন্দ্র সাঁপুই গত হয়েছেন। তিনি মিশ্র ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন। আজ বৃদ্ধার লাঠি হবার কথা ছিল একমাত্র ছেলে তুষার সাপুইয়ের। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে দুবছর ধরে তার দুটো কিডনি বিকল। সুগারের কারণে তার দুটো চোখ পর্যন্ত নষ্ট হয়েছে। একবার হয়ে গেছে হার্ট অ্যাটাকও। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তুষারকে বাঁচাতে হলে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে, না হলে ডায়ালিসিস। কিন্তু ট্রান্সপ্লান্ট করতে খরচ বিপুল তাই বাধ্য হয়ে ডায়ালিসিস শুরু করে তুষারের মা। ডায়ালিসিস হয় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু ধিরে ধিরে সেই খরচও আর সামাল দিয়ে উঠতে পারছেন না বন্দনা দেবী। ছেলের চিকিৎসা করতে গিয়ে দুই বছর ধরে সমস্ত কিছু বিক্রি হয়ে গেছে।

ছেলের এই করুন অবস্থা কোনো ভাবেই আর বৃদ্ধা মা মেনে নিতে পারেননি। চিকিৎসা করার মতো সঙ্গতি নেই। এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর, তৃণমূল চালিত পুরসভায় বার বার দরবার করলেও পাননি কোনো সাহায্য। ফোন করেছেন “দিদিকে বলো”তেও। তাতেও কোন সুরাহা হয়নি। তাই আর কোনো পথ না খুঁজে পেয়ে একেবারে ছেলের জন্মদিনের দিনই স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানালেন অসহায় এই মা।

অসহায় বন্দনা দেবীর চিঠি দেওয়ার পর যে পুরসভা এতদিন মুখ ফিরিয়ে ছিল, আজ সংবাদ মাধ্যমকে জানায় তারা বন্দনা দেবীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে সংবাদ মাধ্যমের আলোর ঝলকানির পরে কি টনক নড়ল পুরসভার? কেন এতদিন একজন সাধারণ নাগরিকের কাতর আবেদনে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না তারা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *