এখন থেকেই প্রতিরোধের দেওয়াল তুলতে হবে, না হলে ফের রিফিউজি হতে হবে: তপন ঘোষ

আমাদের ভারত, কলকাতা, ১৪ ফেব্রুয়ারি: রিফিউজি – অপমানের শব্দ, কলঙ্কের শব্দ, পালিয়ে আসার শব্দ। কিন্তু এখনই সতর্ক না হলে আবারও হিন্দুদের রিফিউজি হতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যারা পালিয়ে এসেছিলেন, তারা কি তাদের সবকটা বোনকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন? এভাবেই ওপার বাংলা থেকে পালিয়ে আসা হিন্দু সহ অন্যদের সতর্ক করলেন কট্টর হিন্দু নেতা তপন ঘোষ এবং এখন থেকেই তিনি প্রতিরোধের দেওয়াল গড়ে তোলার আহ্বান জানান। আজ হিন্দু প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মৌলালী যুব কেন্দ্রে সিংহবাহিনীর এক সভায় তিনি একথা বলেন।

২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তপন ঘোষ। তাই এই দিনটিকে হিন্দু প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করেন তিনি। বর্তমানে সিংহবাহিনী এই কাজ করে যাচ্ছে। মৌলালী যুব কেন্দ্রে সিংহবাহিনীর সভায় তপন ঘোষ বলেন, ১২ বছর আগে সেই দিন হিন্দু প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারপর আশা জেগেছিল এবং সেই আশাতেই ভেবেছিলাম পূর্ববঙ্গে হিন্দুরা যা পারেনি, পশ্চিমবঙ্গে সেটা সম্ভব হবে, আমরা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারব।

তিনি বলেন বর্তমানে মানুষের ঝোঁক রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে। এটা ঠিক, পছন্দের সরকার এলে নিরাপত্তা বাড়বে কিন্তু মনে রাখতে হবে মোদী সরকার একসময় ভোটের মাধ্যমে চলে যাবে। আবার পশ্চিমবঙ্গেও যদি বিজেপি আসে, সে–ও একদিন ভোটের মাধ্যমে সরে যাবে। তখন হিন্দুদের নিরাপত্তা কে দেবে? তাই রাজনীতির পাশাপাশি একটা সামাজিক ছাতা তৈরি করতে হবে। কিন্তু এই কাজটা কঠিন। সেই কঠিন কাজ সম্ভব করতে হলে বাংলায় যে জাতি আছে, যারা যুদ্ধ করে তাদের ক্ষত্রিয়ের আসনে বসাতে হবে। আর তথাকথিত উচ্চবর্ণকে বলতে হবে তোমরা পাশে বসে থাক। তিনি বলেন, বাংলায় সাঁওতাল হাড়ি, বাগদি, ডোম, পৌন্ড্র–এরাই হচ্ছে যোদ্ধা জাত। এদের ক্ষত্রিয়ের আসনে বসাতে হবে এবং মন থেকে মুছে ফেলতে হবে এরা নিচু এবং ছোট জাত, কারণ এই যোদ্ধা জাতিকে যদি আমরা ক্ষত্রিয়ের আসনে বসাতে পারি, তাহলেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। তৈরি হবে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি হিন্দুদের একটা সামাজিক ছাতা, যা আমাদের আত্মরক্ষায় সাহায্য করবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,প বাংলার নমঃশূদ্র যোদ্ধা জাতি, কিন্তু এই সাহসী নমঃশূদ্রদের আজ শক্তিহীন করে রাখা হয়েছে। তাদেরও জাগাতে হবে। তারাও অসীম শক্তির অধিকারী।

দেশভাগের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমরা সাভারকারকে ত্যাগ করে গান্ধীকে নিয়েছি আর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়’কে ত্যাগ করে বিধান রায়, প্রফুল্ল চন্দ্র সেনকে নিয়েছি, কিন্তু তাদের সেই রাস্তায় হেঁটেইতো দেশভাগ হল। আজ স্বাধীনতা সংগ্রামী বিনয়, বাদলের বংশধররা রিফিউজি হয়ে দেশ ছেড়ে পালাল, গোপাল পাঁঠার দেশে আশ্রয় নিতে হল। এই গোপাল মুখার্জিই ১৯৪৬ এর ১৬ আগস্টের ডাইরেক্ট একশন যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নামে পরিচিত তার মোকাবিলা করেছিলেন।

এই রাজ্যে হিন্দুরাও যে নিরাপদ নয় সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নদীয়ার ধানতলা ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সেই সময় বাম শাসনের সূর্য মধ্যগগনে। বাম নেতা নেতা সুবল বাগচির বাড়ির মেয়ের বিয়েতে আসা বরযাত্রীরা যখন দুটো বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন তখন রাস্তায় তাদের বাস দাঁড় করিয়ে টাকা পয়সা মেয়েদের গয়নাগাটি লুট করা হয়। তারপর পুরুষদের বাসের ছাদে চাপিয়ে মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হয় পাশেই নির্মীয়মান একটি মাদ্রাসায়, সেখানে তাদের ধর্ষণ করা হয়। প্রশাসনের কোনো তোয়াক্কা না করেই এই নারকীয় হত্যাকান্ড চালিয়েছিল।
সম্প্রতি সিএএর বিরোধিতা করে উলুবেড়িয়া এবং মুর্শিদাবাদে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে সেটাও তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন মুর্শিদাবাদে ৩০ স্টেশনে ভাঙ্গচুর করা হয়েছে, আগুন দেওয়া হয়েছে, ১৫টি ট্রেন ট্রেন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সব চাপা দেওয়া হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিজেপিও সেই প্রসঙ্গে টু শব্দ করছে না। তিনি বলেন সব চাপা আছে, ধানতলা, বানতলা, বিনোদ মেহেতা হত্যাকান্ড। এসব যারা দেখছেন না তারা অন্ধ হয়ে আছেন। তাই এখন থেকেই প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলতে হবে, এখন থেকেই ইট গাঁথতে হবে, না হলে ফের রিফিউজি হতে হবে।

সিংহবাহিনীর সভাপতি দেবদত্ত মাজি বলেন, আমাদের এই ভারতবর্ষ একমাত্র দেশ, যেখানে বিভিন্ন সময়ে ভগবান অবতার রূপে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাই আমাদের এই দেশ, আমাদের স্বর্গ একে আমরা যে কোনও মূল্যেই রক্ষা করব। মনে করতে হবে আমরা ভগবানের কাজ করছি, আমরা তাঁর সেবা করছি।

সভায় বক্তব্য রাখেন নিঃশব্দ সন্ত্রেসের লেখক রবীন্দ্রনাথ দত্ত এবং মুসলিম শাসন ও ভারতবর্ষের লেখক নিত্যরঞ্জন দাস। আজ নিত্যরঞ্জন দাসের মুসলিম শাসক ও ভারত বর্ষ বইটির চতুর্থ সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ দত্ত একসময় ঢাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে সেইসব দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ডাইরেক্ট অ্যাকশনের দিন কলকাতার পাশাপাশি ঢাকাতেও নারকীয় হত্যালীলা চালানো হয়েছিল। কয়েকদিন ধরে চলেছিল হিন্দু নিধন যজ্ঞ। হিন্দু পুরুষ, মহিলাদের হত্যা করে, উলঙ্গ করে গাড়িতে করে পাঠিয়ে দেওয়া হতো হিন্দু এলাকায়। সেই মৃতদেহ গুলিকে সৎকার করতে বাধ্য করা হতো। শিশুদের পা ধরে আছাড় মেরে তাদের মাথা ভেঙ্গে হত্যা করা হতো। এরপর হয়েছিল নোয়াখালী হিন্দু নিধন যজ্ঞ। ১০ অক্টোবর থেকে সেই হিন্দু নিধন যজ্ঞে হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করে তাদের হত্যা করে জ্যান্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার রাজপথে হিন্দুদের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। জীবন্ত অবস্থায় তাদের কুকুর ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে। ফের ১৯৫০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী তাণ্ডব চালানো হয় ঢাকায়। আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি ছিল। নদীপথে নৌকা ভিড় করেছিল, পথে-ঘাটে গরুর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছিল আর যারা হিন্দুদের বাড়ি লুট করে সাইকেলে করে নিয়ে যাবে তারা সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। নির্দিষ্ট দিনে তারা হিন্দুদের বাড়ি আক্রমণ করে। যুবতী এবং মহিলাদের ধর্ষণ করে। নোয়াখালীতে একইভাবে ধর্ষণের তাণ্ডবলীলা চালানো হয়েছিল। আজ যারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন, আসলে তারা সেই সব মায়েদের সন্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *