আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ৬ জানুয়ারি: জলসার আড়ালে রমরমিয়ে জুয়ার আসর। অদূরেই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করলো দুষ্কৃতিরা। পেট্রোল ঢেলে পোড়ানো হল কিশোরীর দেহ। হায়দ্রাবাদের ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেল কুমারগঞ্জের ঘটনা। থানায় গেলেও এলাকাতেই গেলেন না পুলিশ সুপার। কাঠগড়ায় পুলিশের ভূমিকা। সোমবার সকালে কুমারগঞ্জের সাফানগর এবং অশোকগ্রামের মধ্যবর্তী পাকুরতলা এলাকায় কালভার্টের তলা থেকে থেকে নগ্ন ও অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হয় এক কিশোরীর দেহাংশ। এদিন সকালে জমিতে কৃষি কাজ করতে গিয়ে এমন বীভৎস ঘটনা প্রত্যক্ষ করে শিউরে ওঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই কিশোরীর বয়স বছর সতের। গঙ্গারামপুরের উদয় পঞ্চায়েতের পঞ্চগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় ফুলবাড়ি হাইস্কুল থেকে গতবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে। এদিন হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে ছবি দেখে হাসপাতালে এসে ওই যুবতীর পরিচয় জানায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার সূত্রের খবর, রবিবার দুপুরে ফুলবাড়িতে চাদর কিনবার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে তাঁর মোবাইল সুইচ অফ দেখাচ্ছিল। সন্ধ্যা নামতেই পরিবারের লোকেরা আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করলেও তাঁর সন্ধান পাননি। এদিন সকালে মাঠে কাজ করতে যাবার সময় নির্জন এলাকায় একটি কালভার্টের হিউম পাইপ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন বেশকিছু বাসিন্দারা। যা দেখে সন্দেহ হতেই কাছে গিয়ে এমন বীভৎস ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন তাঁরা। সাথে সাথে খবর দেওয়া হয় কুমারগঞ্জ থানায়। কুমারগঞ্জ থানার ওসি সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তে কালভার্টের উপর প্রচুর রক্ত পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের অনুমান ধারালো অস্ত্র দিয়ে যুবতীর গলা কেটে প্রমাণ লোপাটের জন্য পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ওই কিশোরীকে। পরে প্রমাণ লোপাটের জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনা হাইদ্রাবাদের মহিলা পশু চিকিৎসক খুনের ঘটনাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। যদিও এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছাননি সদ্য দায়িত্ব আসা জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। একই সাথে রবিবার রাতভর অশোকগ্রাম এলাকায় জলসার আড়ালে মদ ও জুয়ার আসর চলছিল বলে দাবি বাসিন্দাদের। সেখানেই দেখা গিয়েছিল ওই ছাত্রীকে বলেও দাবি স্থানীয়দের। থানা থেকে সামান্য দুরে রাতের অন্ধকারে কিভাবে জলসা ও জুয়ার আসর চলছিল তা নিয়ে যেমন প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ প্রশাসন। তেমনি সেখান থেকে সামান্য দূরে নৃশংস এমন খুনের ঘটনায় কুমারগঞ্জ থানার পুলিশের ভূমিকাকেও প্রশ্ন চিহ্নে দাড় করিয়েছে বাসিন্দারা।
ছাত্রীর দাদা, বলেন, রবিবার দুপুরে বাড়ি থেকে চাদর কেনার নামে বের হয়েছিল। তারপর থেকে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। দোষীদের ফাঁসি চান তিনি।
প্রতিবেশী সঞ্জয় চক্রবর্তি জানিয়েছেন, এমন ঘটনা তাঁরা আগে কখনো দেখেননি। রাতভর জলসা চলেছে, সেখান থেকে সামান্য দূরেই এমন ঘটনা কিভাবে ঘটলো। পুলিশ থাকলে এমনটা কখনই সম্ভব হতনা।
কুমারগঞ্জের বাসিন্দা মুসলেম মিয়াঁ, মাফুজা বিবি জানিয়েছেন, তাঁদের অনুমান ফাঁকা মাঠে ধর্ষণের পর খুন করে ওই যুবতীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন বীভৎসতা তাঁরা আগে কখনো দেখেননি।
জেলা পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত জানিয়েছেন, পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে। ঘটনার পূর্নাঙ্গ তদন্ত করা হবে।