জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ২ ফেব্রুয়ারি: সোমবার মাওবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি সরকারের ঘোষিত প্যাকেজ চেয়ে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখায়। এই পরিবারগুলির অনেকে মাওবাদী হামলায় মারা গেছেন। আবার অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এদিন এইসব পরিবারগুলির সদস্যরা পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসকের কাছে অবিলম্বে সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাওবাদী তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছিল সমগ্র জঙ্গলমহল। বিশেষত, অবিভক্ত মেদিনীপুর (ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর), পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া’র পরিস্থিতি ছিল ভয়ঙ্কর। খুন হয়েছিলেন একাধিক বাম নেতা-কর্মী থেকে সাধারণ মানুষ। বহু আদিবাসী, কুড়মি ও অন্যান্য শ্রেণির খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ মাওবাদীদের সঙ্গ দিতে বাধ্য হয়েছিল। না হলে জুটতো অকথ্য অত্যাচার। কেউ কেউ সেই অন্ধকার পথে গিয়ে হারিয়েও গেছেন। মাওবাদীদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল, ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে শাসন ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গলমহলকে মাওমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুই আমলেই এনকাউন্টার করা হয়েছে একাধিক মাও নেতাকে। নতুন সরকারের আমলে অসংখ্য মাও নেতা, নেত্রী ও সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছেন। অধিকাংশেরই জুটেছে চাকরি ও পুনর্বাসন। সরকারের পক্ষ থেকে মাওবাদীদের হাতে নিহত পরিবারগুলিকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু, সেই ঘোষণা বা প্রতিশ্রুতি যে এখনও সম্পূর্ণ করা হয়নি, তা বিভিন্ন সময়ে অত্যাচারিত বা ভুক্তভোগী পরিবারগুলির আন্দোলন থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সোমবার মেদিনীপুর শহরে জেলাশাসকের দপ্তরে এমনই ১৫৫টি পরিবার এসেছিল শালবনী ব্লক থেকে। যাদের মধ্যে কোনও পরিবার মাওবাদীদের দ্বারা অত্যাচারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবার কোনও পরিবার বাধ্য হয়ে মাওবাদী দলে নাম লিখিয়ে রাজরোষে পড়ে অজস্র মামলায় জড়িয়ে আছে। সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেও এখনও তাঁদের মাও মামলা থেকে মুক্তি জোটেনি।
সোমবার শালবনী ব্লকের এরকমই দেড় শতাধিক পরিবার প্রশাসনের কাছে পুনর্বাসন ও মামলা থেকে অব্যাহতির আর্তি নিয়ে পৌঁছেছিল। রাজ্য সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত করা এবং মাওবাদী তকমা দিয়ে পুলিশি মামলার নিষ্পত্তির দাবিতে তাঁরা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশনে কর্মসূচি পালন করেন। মাওবাদীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ এবং মাওবাদী মামলায় গ্রেপ্তার হওয়াদের পরিবার পরিজনেরাও জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়। তাদের পক্ষে রাজীব মাহাত বলেন, “সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের হাতে ক্ষতিগ্রস্থ এবং মাওবাদী অভিযোগে জেল খেটেছেন এই ধরনের পরিবারগুলিকে সরকারি পুনর্বাসনের প্যাকেজ দিয়েছেন। কিন্তু শালবনী ব্লকের ১৫৫টি পরিবার আজও বঞ্চিত। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এদিনের বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচি।”