আইডিবিআই ব্যাঙ্ক বিক্রির বিরোধিতায় বিক্ষোভ

আমাদের ভারত, ১২ অক্টোবর: আইডিবিআই ব্যাঙ্ক বিক্রির সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বিক্ষোভ দেখাল কর্মী সংগঠন।

বিবৃতিতে তাদের তরফে জানানো হয়েছে, “বহু আলোচনার পর ঠিক হয়েছে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক বিক্রি করে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগ্রহী ক্রেতাদের থেকে ইচ্ছাপত্র চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অংশীদারি কেনার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা আইডিবিআই ব্যাঙ্ক পরিচালনার রাশও হাতে পাবে। কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যাঙ্কের ৬০.৭২% শেয়ার বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৩০.৪৮% রয়েছে সরকারের হাতে এবং জীবন বিমা নিগম বা এলআই সি’র হাতে রয়েছে ৩০.২৪%।

উল্লেখ্য, বছরখানেক আগেই কেন্দ্র, রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা নিগমের কাছে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের ৪৯.২৪% শেয়ার বিক্রি করে রেখেছে। বর্তমানে কেন্দ্রের হাতে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের মোট ৪৫.৪৮% শেয়ার রয়েছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫.২% রয়েছে সাধারণ লগ্নিকারীদের হাতে। ব্যাঙ্কের ৬০.৭২% শেয়ার বিক্রি করার পর কেন্দ্র ও জীবন বিমা নিগমের হাতে থাকবে মোট ৩৪% শেয়ার।

বর্তমানে আইডিবিআই-এর প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪২.৭০ টাকার কাছাকাছি। সেই হিসাবে ঐ ৬০.৭২% বিক্রি করে পাওয়ার কথা ২৭,৮০০ কোটি টাকারও বেশি।

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ইউনিটি ফোরাম এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এআইইউটিইউসি (অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার)।

ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ রায় মণ্ডলের মতে, বেসরকারি ব্যাঙ্কের ইতিহাস কারও অজানা নয়। গত শতাব্দীর মধ্যভাগে বহু বেসরকারি ব্যাঙ্কে লালবাতি জ্বলার সুবাদে বহু মানুষ তাঁদের কষ্টার্জিত ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সম্পদ খুইয়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হয়েছেন। ব্যাঙ্ক কর্মীরা অকালে তাঁদের কাজ হারিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার আবার সেই অন্ধকার গহ্বরে ব্যাঙ্ক শিল্পকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। তিনি ব্যাঙ্ক কর্মী সহ সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে এর বিরুদ্ধে এগিয়ে এসে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এআইইউটিইউসি’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বুধবার প্রেস বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার রেল, বিমা, বিদ্যুৎ, কয়লা ইস্পাত প্রভৃতি বিভিন্ন সরকারি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে দফায় দফায় বেসরকারিকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা তারই অঙ্গ। বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বিশাল আমানত শিল্পায়ন সহ জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সার্বিকভাবে ব্যাঙ্ক শিল্প একটি লাভজনক সেক্টর এবং সাধারণ মানুষও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা রাখাকে অনেক নিরাপদ মনে করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে এভাবে বেসরকারিকরণের মধ্য দিয়ে সরকার একচেটিয়া পুঁজির মালিকদের সুযোগ করে দিচ্ছে যাতে তারা জনগণের টাকা লুঠ করার অবাধ সুযোগ পেয়ে যায়। এর ফলে সামগ্রিক ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এবং দেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়বে। তিনি বিজেপি সরকারের এই জনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইডিবিআই ব্যাঙ্কের সমস্ত কর্মচারী সহ সমস্ত স্তরের শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *