নারী স্বাধীনতার লক্ষ্যে স্বনির্ভরতার পথে প্রতিভা

আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ১০ মার্চ: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদার গৃহবধূ প্রতিভা জানা  রেঁধে চুল বেঁধে শুধু নিজে স্বনির্ভর হননি এলাকার মেয়েদেরও স্বনির্ভর করে তুলেছেন। নিজে স্বনির্ভর হয়ে বাঁচার সঙ্গে এলাকার মেয়েদেরও স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে শিখিয়েছেন তিনি। নিজে স্বনির্ভর হওয়া এবং অন্যদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে  প্রথমদিকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। কিছু একটা করতেই হবে এই ভেবে এলাকার ৮ – ১০ জন গৃহবধূ ও মেয়েদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। এরপর অব্যবহার্য ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র, পাট, নাইলন দড়ি, প্লাস্টিকের বোতল যাবতীয় জিনিস দিয়ে দৈনন্দিন বহু ব্যবহার্য দ্রব্য  তৈরি করতে শুরু করেন তারা। সেগুলো বিভিন্ন মেলা ও বাজারে বিক্রি করে ভালো পয়সা পেতে থাকেন। এরপর  বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজ খরচে টেলারিং, বিউটিশিয়ান, টেডি তৈরি সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তারা। শুরু হয় আসল রোজগারের রাস্তা।

তাদের কাজে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসে এলাকার অন্যান্য গৃহবধূ ও মেয়েরা।নিজেরা ওই কোর্সগুলি শেখার পর এলাকার মেয়েদেরকে শেখান। বাদাম, ছোলা, গম, চিনি ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করেন একটি লাড্ডু। যার নাম পৌষ্টিক লাড্ডু। এই লাড্ডুর পুষ্টিগুণ ভালো, এগুলি বাচ্চারা খেতে ভালবাসে। তাই সরকারিভাবে যাতে এগুলি বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে দেওয়া যায় এর জন্য তাঁরা যোগাযোগ করেন সরকারি দপ্তরে। এখন বর্তমান বিভিন্ন শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে ছোট বাচ্চাদের এই পৌষ্টিক লাড্ডু দেওয়া হয়। পৌষ্টিক লাড্ডু একটি বিশেষ জায়গা করে নেওয়ার পর সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেতে শুরু করেন তারা। ৮ – ১০ জন মেয়েকে নিয়ে শুরু করা হয় একেকটি গ্রুপ। এইভাবে এখন প্রায় ২০০ টি গ্রুপ তৈরি হয়েছে বেলদা এলাকায়।এই গ্রুপ গুলি থেকে কুড়িজন করে সরকারিভাবে বিনা খরচে মাশরুম চাষ, বিউটিশিয়ান, টেলারিং, টেডি বিয়ার তৈরি, পশুপালন, আমাদের অব্যবহার্য দ্রব্যাদি থেকে সৃজনাত্মক ও উৎপাদনাত্মক দ্রব্যাদি তৈরি ইত্যাদি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অনেকে নিচ্ছেন। এইসব উৎপাদনের সঙ্গে এবার নতুন করে সংযোজিত হচ্ছে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ। যারা এই চাষ করতে ও প্রশিক্ষণ নিতে চান তাদের দল গঠন করার কাজ চলছে। 

ঘর সামলানোর পাশাপাশি তারা এভাবেই নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলেছেন এবং এলাকার অন্যান্য গৃহবধূ ও মেয়েদের স্বনির্ভর হতে শেখাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রতিভা জানার বক্তব্য -“বর্তমান মেয়েরা আর কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।তবে মেয়েদের প্রকৃত স্বাধীনতা এবং সম্মান পেতে অর্থ রোজগারের প্রয়োজন।কারণ অর্থ ছাড়া আজকের দিনে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারে না। তাই প্রত্যেকটি মেয়ে যাতে স্বাবলম্বী হয় এবং নিজেদের অধিকার নিজেদের রোজগার নিজেরা বুঝে নিতে পারে সেই  লক্ষ্য নিয়েই আমাদের এগিয়ে চলা ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *