পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ ফেব্রুয়ারি: ৭ জানুয়ারি, ১৯৯৩ সাল। নদিয়ার এক মূক ও বধির মহিলাকে নিয়ে মহাকরণে গিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেয়েটির ধর্ষণের বিচার চাইতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দেখা করা তো দূরের কথা, চুলের মুঠি ধরে মহাকরণ থেকে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকে। চ্যাংদোলা করে তাঁকে যখন টেনে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ, তখন একটা কথাই বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘একদিন এই রাইটার্সেই মাথা উঁচু করে ঢুকব।’ তারপর থেকে গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। যুব কংগ্রেসে নেত্রী থেকে মমতা আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে বহু ইতিহাস। সেরকমই একগুচ্ছ কাহিনি স্থান পেয়েছে মেদিনীপুর শহরের অ্যারিয়ান্স ক্লাবের সরস্বতী পুজোর থিমে।
সরস্বতী পুজো উপলক্ষ্যে এবার জমে উঠেছে মেদিনীপুর শহরের কলেজ স্কোয়ার। তবে মেদিনীপুর শহরের কলেজ স্কোয়ারে সরস্বতী পুজোর মূল আকর্ষণ হল রাজনৈতিক ব্যাঙ্গচিত্র। বাগদেবীর আরাধনার পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রে মজে থাকেন শহরবাসী। প্রতিটি ব্যঙ্গচিত্রই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলকে খোঁচা দিয়ে তৈরি। শহরের শিক্ষিত যুব সম্প্রদায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র এবং যুব সংগঠনই এসবের মূল কারিগর।
তৃণমূল পরিচালিত পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম খেলা হবে, অগ্নিকন্যা, অবসর, অ্যারিয়ান্স প্রভৃতি। অন্যদিকে বিজেপি পরিচালিত পুজোগুলির অন্যতম গরিমা, জাগরণ। এরই পাশাপাশি বাম প্রভাবিত বেশকিছু মণ্ডপ যেমন রয়েছে, তেমনই অরাজনৈতিক সংগঠনের পুজোও রয়েছে। তবে অ্যারিয়ান্স ক্লাব এবছর ব্যঙ্গচিত্র থেকে সরে এসে মমতা বন্দনায় মেতেছে। সরস্বতী প্রতিমার সঙ্গে স্থান পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তিও। মণ্ডপে মমতার জনমুখী প্রকল্পের প্রচারের পাশাপাশি পুরনো দিনের বহু ছবির সংকলন করা হয়েছে। টালির চালের বাড়ি থেকে বাংলার তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার গল্প স্থান পেয়েছে তাদের থিমে।
অন্যদিকে, বিজেপি প্রভাবিত জাগরণ ক্লাব তাদের ব্যঙ্গচিত্রে ‘ইন্ডি জোটের পিন্ডি’ চটকেছেন। বাংলায় লাগামছাড়া দুর্নীতি, চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলন, ডিএ আন্দোলন থেকে শুরু করে সন্দেশখালির ঘটনা উঠে এসেছে তাদের থিমে। বিজেপি প্রভাবিত গরিমা ক্লাবের ব্যঙ্গচিত্রে স্থান পেয়েছে রাম মন্দির। রাহুল গান্ধীকে ব্যঙ্গ করে লেখা হয়েছে, ‘মাম্মি, আমি পুদানমন্ত্রী হব।’
তবে তৃণমূল প্রভাবিত ‘খেলা হবে’ ক্লাব নিজেদের ব্যঙ্গচিত্রে তুলোধনা করেছেন মোদী-অমিত শাহকে। নরেন্দ্র মোদী কীভাবে আদানিদের সেবায় নিয়োজিত, তা ফুটে উঠেছে ব্যঙ্গচিত্রে। সবমিলিয়ে এবারও কলেজ স্কোয়ারের পুজো জমজমাট।

