আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ১৬ ফেব্রুয়ারি: পুলিশের পোশাক পড়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বিতর্কে জড়ালেন রামপুরহাট থানার এক এএসআই। এই ঘটনায় প্রশাসন রাষ্ট্রশক্তি তৃণমূলের পায়ে মাথা নত করল বলে মনে করছেন বিরোধীরা। ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেন বিরোধীরা।
রবিবার রামপুরহাট থানায় ছিল রক্তদান শিবির। একই সঙ্গে সম্মানীয় বলে একটি প্রকল্প চালু করা হয় এদিন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বীরভূম জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব ভট্টাচার্য, রামপুরহাট ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পান্থ দাস। ওই অনুষ্ঠান থেকে রামপুরহাট পুরসভা এলাকায় সম্মানীয় প্রকল্পের জন্য দুটি দল গড়ে দেওয়া হয়। একটি দলের দল নেতা হলেন রামপুরহাট থানার এ এস আই রঞ্জন দত্ত। মঞ্চ থেকে তার হাতে সম্মানীয় প্রকল্পের নিয়মকানুনের কাগজপত্র তুলে দেন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কাগজ হাতে নিয়েই আশিসবাবুকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন রঞ্জনবাবু। এনিয়েই বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব বর্মণ বলেন, “তৃণমূলের জামানায় সব সম্ভব। এ রাজ্যে আইন তৃণমূলের তৈরি করা। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করতে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় পায়ের কাছে অবনত। আশিসবাবুকে খুশি করতে পুলিশ অফিসাররা অবনত। সংবিধান এদের কাছে তুচ্ছ। পুলিশ এখানে পায়ের নিচে মাথা নত করে বোঝাতে চাইছেন তিনি কতটা বাধ্য। এই পুলিশ নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা করে না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ক্ষেত্রে এটা ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। তাছাড়া এ রাজ্যে আই এস অফিসাররা মুখ্যমন্ত্রীর চটির ফিতে বেঁধে দেয়। তৃণমূলের ধর্না মঞ্চে বসে। ফলে এতো একজন নিচুতলার পুলিশ অফিসার”।
বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, “ওই পুলিশ অফিসার পোশাক পড়ে প্রণাম করে বুঝিয়ে দিলে তিনি আশিসবাবুর অতিবড় শিষ্য। পুলিশের পোশাক পড়ে চাকরিতে যোগদানের আগে রাজধর্ম পালনের শপথ নিয়েছিলেন। মাথায় সেই অশোকস্তম্ভ লাগিয়ে পায়ের কাছে মাথা নত করে তিনি রাষ্ট্রশক্তিকে অবমাননা করেছেন। আমরা দাবি করব নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করুন। রাজধর্ম পালন করুন। এই ঘটনার নিন্দা করছি”।
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রণাম করতেই পারেন। কিন্তু যখন পোশাক পড়ে থাকবেন তখন তিনি প্রণাম করতে পারেন না। আমি দাবি করছি এই ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক”।
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশের নিয়মে কি রয়েছে বলতে পারব না। তবে হয়তো উনি আবেগ বশত হয়ে প্রণাম করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি তাকে প্রণাম করতে দিইনি। আমার অন্য পরিচয় হল আমি একজন অধ্যাপক। সেই কারণে অনেক ছাত্র আমাকে প্রণাম করে”।
জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, “আমি অনুষ্ঠানে ছিলাম না। ফলে কি হয়েছে জানি না। না জেনে কোন মন্তব্য করব না”। যদিও এ নিয়ে বার বার ফোন করা হলেও ধরেননি রঞ্জন দত্ত।